ক্রেতার অভাবে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে আলু


বরগুনায় ক্রেতার অভাবে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে হাজারকে হাজার মণ আলু। এ বছর ফলন ভালো হলেও কোন হিমাগার না থাকায় আলু সংরক্ষণ করতে পারছে না কৃষকরা। এতে লাভ তো দূরে থাকুক, আলু আবাদের খরচটুকু না ওঠার শঙ্কা চাষীরা। তবে এই আলু স্থানীয় বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বরগুনা কৃষি বিপনন বিভাগ।
চলতি এই বছরে বরগুনায় আলুর বীজ বপনের পর অকাল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায় সকল বীজ। এরপরে আবসর পূর্নরায় বীজ বপন করতে হয় কৃষকদের। ফলে এ বছর বরগুনায় আলু আবাদে দ্বিগুণ খরচ হয়েছে । এত ঝড়ঝাপটার পরেও ফলন ভালো হয় কিন্তু পর্যাপ্ত দাম আর ক্রেতার অভাবে ক্ষেতেই স্তুপ করে ফেলে রাখা হয়েছে হাজার হাজার মন আলু।
আবার খরচের ভয়ে অনেক চাষী আলু তুলছেন না জমি থেকে। এর ফলে বরগুনায় নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে কয়েক হাজার মণ আলু। একদিকে আলুর দাম কম অপর দিকে ক্রেতা নেই, তার উপরে নেই সংরক্ষণ করার হিমাগার। তাই আলু নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বরগুনার চাষীদের।
বরগুনার সদর উপজেলা,বামনা উপজেলা,পাথরঘাটার রূপধণ ও কামার হাট গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলুর ক্ষেতগুলোতে স্তুপ করে রাখা হয়েছে সদ্য তোলা মনকে মন আলু। কোন কোন স্তুপের আলুতে পচনধরা শুরু হয়েছে। কোথাও আবার আলুর স্তুপে দেখা দিয়েছে ছত্রাকের আক্রমণ। আলুর ফলন বেশি হওয়ায় দাম কম হলেও ক্রেতা সমাগম তেমন একটা নেই। এর ফলে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। একারণে এখন পর্যন্ত আলু তোলেননি প্রায় চাষী।
পাথরঘাটার রূপধন ও কামারহাট গ্রামের আলগীর, মানিক, সফিক, শাহিন সহ কয়েকজন চাষী জানান, এই বছর আলু মৌসুম শুরুতে প্রথমে আমরা আলুর বীজ লাগিয়েছিলাম। পরবর্তীতে অকাল বৃষ্টিতে সব বীজ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আবার দ্বীগুণ খরচ করে পুনরায় জমি চাষ করে আলু আবাদ করি। এবছর আমাদের আলুর ব্যপক ফলন হয়েছে। কিন্ত পর্যপ্ত দাম ওক্রেতা এবং সংরক্ষণ যায়গা না থাকায় মাঠেই পঁচে যাচ্ছে মনকে মন আলু।
সদর উপজেলা রায়ভোগ মরহালী গ্রামের চাষী বিপ্লাব বলেন, প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর আমাদের ফলন অনেক বেশি হয়েছে। আবার অকাল বৃষ্টির কারনে অধিক খরচ ও হয়েছে। এ বছর আলুর অনেক দাম কম এবং ক্রেতাও নেই তেমন একটা তাই আমরা আলু নিয়ে বিপাকে পরেছি।খুব শিগগিরই যদি এই আলু বিক্রি করতে না পারি তাহলে অনেক বড় একটা লোকসানে পরবো আমরা।
পাথরঘাটার রূপধন এলাকার চাষী জহির গাজীর বলেন,এইবার আলুর ফলন অধিক হলেও বিক্রি করতে পারছিনা। দাম অনেক কম হলেও নেই ক্রেতা। আমার প্রায় ৪৫-৫০ মণ আলু স্তুপ করা রয়েছে জমিতে। আজ দেখলাম কয়েকটা স্তুপে পচন শুরু হয়েছে। ক্ষেতে আরও আলু আছে। ওসব আলু উঠাতে শ্রমিকদের টাকা দিতে হবে, তাই আলু উঠানো হয়নি, কারন আমাদের বিক্রি নেই। আর আমাদের আলুগুলো সংরক্ষণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেই।
বামনার ডৌয়াতলা গ্রামের চাষী মিজান বলেন, আল্লাহর রহমতে এই বচ্ছর আলুর একছের ফনল হইছে। কিন্তু দাম নাই দাম একছের কোম হের পর আবার কেউ কেনতেও আয় না। মোগো এই আলু রাহার জন্যে কোনো হিমাগার নাই। যদি থাকতে হেলে আলুগুলা পচা লাগতে না।মোর আলু গুলো এহন মাঠে বসেই নস্ট হইতাছে।
জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা আবদুস সালাম কবির বলেন, বরগুনা জেলায় ব্যাপক আলুর ফলন হয়ছে। ক্রেতা সমাগম কম থাকলেও বরগুনায় উৎপাদিত আলু খুব শিগগিরই স্থানীয় বাজারে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হবে। এবং কৃষকরা যাতে পর্যাপ্ত দাম পায় সে দিকে আমরা খেয়াল রাখবো।
বরগুনা জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সৈয়দ জোবায়দুল আলম বলেন, বগুনায় প্রতিবছর ব্যপক পরিমানে আলুর চাষ হয়। এবং এবছর প্রতি বছরের চেয়ে অধিক ফনল হয়েছে।কিন্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মাঠেই পঁচে যাচ্ছে আলুগুলো। এতে লোকসান হচ্ছে চাষীদের। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা গেলে বরগুনার উৎপাদিত আলু দিয়েই পার্শবর্তী জেলাগুলোর চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে এব্যাপারে কথা বলবো।
জেলায় এ বছর এক হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে আলু আবাদ হয় এক হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে।
এইচকেআর
