নড়বড়ে সাঁকোই চলাচলের ভরসা


বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ১৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য রয়েছে একটি নড়বড়ে সাঁকো।
আমতলী উপজেলার আড়পাঙগাশিয়া ইউনিয়নের চড়কগাছিয়া ও তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং ও গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের ওপর একমাত্র চলাচলের পথ বাশের সাকো । সাঁকোটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয়।
আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া, ঘোপখালী ও তালতলীর পচাঁকোড়ালিয়া, চান্দখালী, কলারংসহ এলাকার প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের আমতলী ও তালতলী উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কলারং থেকে চড়কগাছিয়া বাঁশের তৈরি সাঁকোটি।
স্থানীয় জনসাধারন প্রতি বছর সাঁকো মেরামত করে পারাপারের ব্যবস্থা করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ এবং দৈনন্দিন কর্মসংস্থানের কারণে সাঁকো পেরিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করাসহ রোগীর জরুরি চিকিৎসার জন্য নড়বড়ে সাঁকোর ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এতে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয় ওই এলাকার শিশু, নারী, বৃদ্ধ, রোগী ও প্রসূতি নারীদের।
প্রায় ৩০৩২ বছর আগে এখানের খেয়ানৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই খালের ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এ বাঁশের সাঁকো স্থাপন করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া ইউনিয়নের কলারং থেকে আমতলীর চড়কগাছিয়া গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এ সাঁকো। গ্রমের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন পূর্ব চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাহলান বাড়ি কওমি মাদ্রাসা ও ড. মো. শহিদুল ইসলাম কলেজের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হয়।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, ওই সাঁকো চড়কগাছিয়া গ্রামের দুই শতাধিক লোক দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে। তেমনি কলারং গ্রামের শতাধিক কৃষকও তাঁদের কৃষিকাজ করার জন্য সাঁকোটি ব্যবহার করেন। একদিকে যেমন ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো পার হতে হয়, তেমনি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় এলাকাবাসীকে।
চড়কগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল বলেন, ‘আমাদের চাষাবাদের জমি খালের ওপারে হওয়ায় এই সাঁকো দিয়ে ফসল আনা-নেওয়া করতে হয়। প্রতিদিনই এখান দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করে। আমি গত কয়েকদিন আগে সাঁকো ভেঙে পড়ে গিয়েছিলাম। এই সাঁকোয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
কলারং গ্রামের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, বাঁশের সাঁকো গ্রামের মানুষের দু:খ। কবে এখানে সেতু হবে তা জানি না। সেতুটি নির্মাণ করা হলে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।’
ড. মো. শহিদুল ইসলাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘কলারং খালের দুপাশে দুই উপজেলা হওয়ায় সেতু নির্মাণে কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা ভেবে দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
পঁচাকোড়ালিয়া ইউপির (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান জাফর মিয়া বলেন, ‘সাঁকোটি অনেক বড় হওয়াতে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তাই ওপারের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে এলজিইডিতে সুপারিশ করা হবে, যাতে দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণ করা যায়।’
আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউপির চেয়ারম্যান সোহেলি পারভীন মালা বলেন, ‘আমার স্বামী চেয়ারম্যান থাকার সময় এই খালে সেতু নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেটা কী অবস্থায় আছে খোঁজ খবর নিয়ে জরুরী ভাবে সেতু নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো, হাবিবুর রহমান বলেন, খোঁজ নিয়ে জরুরী ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচকেআর
