জেএমবির দুই সদস্যের কারাদণ্ড, খালাস ৬


পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলা মামলার রায়ে দুজনকে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মূল পরিকল্পনাকারী আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। এ ছাড়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তার খামখেয়ালিতে চান মিয়াসহ চার আসামি হয়রানির শিকার হয়েছেন। শারীরিক-মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান আলোচিত এই মামলার রায় দেন। সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে আসামিদের আদালতে তোলা হয়। এরপর ১১টা ৩৪ মিনিটে আসামিদের উপস্থিতিতে বিচারক রায় পড়া শুরু করুন। রায় পড়া শেষ হলে আদালত এ মামলায় জেএমবির সদস্য আরমান ওরফে মনিরকে ১০ বছর এবং কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিককে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অন্য ছয় আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ও রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘আসামি হিরন ও আলবানী এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে তাঁদের নাম পুলিশ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেননি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সফিউদ্দিন শেখ কার কাছ থেকে কিংবা কোথায় কিভাবে জানতে পেরেছেন যে হিরন ও আলবানী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি। হিরন ও আলবানী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সমর্থনে কোনো কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেননি। হোসেনি দালান গ্রেনেড হামলার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী নোমানকে কেন আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সে বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কোনো বক্তব্য দেননি। এ ছাড়া সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই চান মিয়া, ওমর ফারুক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়াকে এই মামলায় আসামি হিসেবে অযথাই গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা মারাত্মক ভুল করেছেন এবং চরমভাবে দায়িত্ব্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও হামলাকারীরা আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। ’
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে হোসেনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় এসআই জালাল উদ্দিন মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি চকবাজার থানার পুলিশ তদন্ত করে। পরে তদন্তের দায়িত্ব ডিবিকে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষে ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পর আদালতে মামলার বাদী মো. জালাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেন। ২০১৮ সালের ১৪ মে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।
এইচকেআর
