পাঁচ বছর পর বাকেরগঞ্জের ক্লু-লেস হত্যা মামলার জট খুলল পিবিআই


দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের ক্লু-লেস মামুন খাঁ (২৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে বিবিআই। সেই সাথে গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের প্রধান ঘাতক মো. করিম মোল্লা (২৩) কে। পরকীয়ার জেরে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে মামুন খাঁ কে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যায় করিম মোল্লা। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে ঢাকার ধামরাই থানাধীন বরাত নগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বরিশাল জেলা পিবিআই।
গ্রেফতারকৃত মো. করিম মোল্লা বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের মাহতাব মোল্লা ও মাছুমা বেগম দম্পতির ছেলে। বরিশাল জেলা পিবিআই থেকে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে বাকেরগঞ্জ থানায় মামুন খাঁকে হত্যার ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর-১৭। আদালতের নির্দেশে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। ক্লু-লেস এই মামলাটির তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. আবু জাফর।
পিবিআই জানায়, ‘তদন্তকালে প্রকাশ পায় যে ‘ভিকটিম মামুন খাঁ’র সাথে পার্শ্ববর্তী কাফিলা গ্রামের সাথী আক্তার ঝর্ণার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তবে সাথী আক্তার ঝর্ণার বিয়ে হয় একই এলাকার নাজমুল ইসলাম রুবেলের সাথে। বিয়ের পরেও ঝর্ণা ও মামুণের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। যা জানতে পারেন স্বামী নাজমুল ইসলাম রুবেল। তিনি তার স্ত্রী এবং তার পরকীয়া প্রেমিক মামুন খাঁকে একাধিকবার সম্পর্ক ছেদ করার জন্য বলেন। কিন্তু তার পরেও দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান থেকে যায়।
পিবিআই জানায়, ঝর্ণার স্বামী রুবেলের সাথে গ্রেফতারকৃত মো. করিম মোল্লার বন্ধু নাজমুল তালুকদারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিলো। সেই সুবাদে রুবেল ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে মামুন খাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নাজমুল তালুকদারের সাথে। আর এই হত্যার পরিকল্পনা হয় ঘটনার এক সপ্তাহ পূর্বে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নাজমুল তালুকদার মাহফিলের কথা বলে মামুন খাঁকে নিজ খরচে ঢাকা থেকে বাকেরগঞ্জ নিয়ে আসেন। একইদিন বেলা ১২টার দিকে নাজমুল তালুকদার ফোন করেন করিম মোল্লাকে। পরে নাজমুল তালুকদারের বাড়ির পিছনে বসে করিম ও তার মধ্যে কথা হয়। সেখানে বসেই মামুন খাঁকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করে। এরপর করিম মোল্লার সামনেই নাজমুল ইসলাম রুবেল মুঠোফোনে ঝর্ণার পরকীয়া প্রেমিক মামুন খাঁকে হত্যার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা করার জন্য বলেন নাজমুল তালুকদার। এরপর তারা বাড়ি চলে যান।
পরবর্তীতে সন্ধ্যার দিকে নাজমুল তালুকদার ভাড়াটিয়া খুনি করিম মোল্লাকে ফোন করে বাহিরে আসতে বলেন। তিনি বাহিরে এসে দেখতে পান নাজমুল তালুকদার ও তার ফুফাতো ভাই রহিম সাজ্জাদ এবং সাদ্দাম এক সঙ্গে আছেন। রাত ৮টার পর্যন্ত তারা ঘোরাফেরা করেন। এরপর সাদ্দামকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন নাজমুল তালুকদার। কেননা সাদ্দাম হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
এদিকে, পরিকল্পনা অনুযায়ী নাজমুল তালুকদার তার স্ত্রী ঝর্ণার পরকীয়া প্রেমিক মামুন খাঁজে রাত ১০টার দিকে ফোন করে এনে করিম মোল্লার সাথে তাস খেলায় ব্যস্ত রাখেন। সেখানে করিম মোল্লা ছাড়াও নাজমুল তালুকদার এবং রহিম সাজ্জালও ছিলেন। এরপর রাত ৪টার দিকে মামুনকে ফোন করে নিজের বাড়িতে ডাকেন ঝর্ণা। মামুন পরকীয়া প্রেমিকার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলে তার পিছু নেয় করিম মোল্লা, নাজমুল তালুকদার ও রহিম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন যখন ঝর্ণার ঘরের পাশে যায় তখন ঝর্ণা ও তার স্বামী নাজমুল ইসলাম রুবেল তাকে ঝাপটে ধরে। সাথে সাথে নাজমুল তালুকদার ও আব্দুর রহিম ভিকটিম মামুনকে চেপে ধরে। এসময় বাইরে পাহারায় ছিলেন করিম মোল্লা। ঘটনার সময় নাজমুল ইসলাম রুবেল ভিকটিম মামুনের গলা চেপে ধরে। আর ঝর্ণা মামুনের পা চেপে ধরে।
এছাড়া নাজমুল তালুকদার হাত এবং আব্দুর রহিম মুখ চেপে ধরেন মামুনের। এক পর্যায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে মামুন। পরে মামুনের মৃত্যু হয়েছে ভেবে ঝর্ণার ওড়না দিয়ে তার গলায় ফাঁস দিয়ে গাব গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে যে যার মত করে বাড়ি ফিরে যান। এভাবেই হত্যা করা হয় মামুন খাঁকে।
পিবিআই জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত করিম মোল্লা স্বীকারক্তি দিয়েছে। তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
কেআর
