ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news

গান শুনতে শুনতেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হৃদস্পন্দন বন্ধ

গান শুনতে শুনতেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হৃদস্পন্দন বন্ধ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও প্রকাশ করে গেছেন গানের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। সেই গান শুনতে শুনতেই হৃদ্‌স্পন্দন বন্ধ হয় ‘গীতশ্রী’র। 

কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা নার্সরা জানান, মৃত্যুর আগে ‘গীতশ্রী’র ইচ্ছা হয়, টিভিতে গান শুনবেন। কিন্তু আইসিইউয়ে তা কীভাবে সম্ভব, সেই ভাবনার মাঝেই আমাদের কাছে গান শোনানোর আবদার করেন তিনি। আইসিইউয়ের নার্সিং ইনচার্জ ঝুমা বিশ্বাসকে বলেন ‘‘তুমি গান জানো? শোনাতে পারবে আমায়?’’ তার আগে আমরা তাকে বার বার অনুরোধ করি, ‘ম্যাডাম, চোখ বুজে একটু বিশ্রাম নিন’। কিন্তু নারাজ ‘গীতশ্রী’। 

‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’র সুরে বাঙালিকে আজও আবিষ্ট করে রেখেছে যার গলা, তার আবদারে না করতে পারেননি রবীন্দ্রসঙ্গীতে তালিম নেওয়া তনুশ্রী সামন্ত। গেয়ে ওঠেন, ‘তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে’, ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে’। তারপরেও বিশ্রাম নিতে নারাজ সন্ধ্যা। গান না শুনলে যে তিনি বিশ্রাম নিতে পারছেন না! অগত্যা আইসিইউয়ের নার্সিং ইনচার্জ ঝুমা বিশ্বাস নিজের মোবাইলে চালালেন শিল্পীর পছন্দের গান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউয়ে ‘গীতশ্রী’র ১০৪ নম্বর শয্যা তখন ভেসে যাচ্ছে সুরের মূর্ছনায়।
এক সময়ে শুরু হল ‘এই শহর থেকে আরও অনেক দূরে চলো কোথাও চলে যাই...’। চোখ বন্ধ করেই শুনছেন সন্ধ্যা। আচমকা মনিটরে চোখ গেল চিকিৎসক-নার্সদের। হৃদ্‌স্পন্দন নামতে শুরু করেছে— ৭২ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ২১। ‘ম্যাডাম ম্যাডাম’ ডাকেও আর সাড়া দিচ্ছেন না। সিপিআর, ভেন্টিলেশন দেওয়া হলেও চোখ আর খুললেন না সন্ধ্যা।

২৭ জানুয়ারি কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সন্ধ্যা। করোনামুক্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালের ৩৫৫ নম্বর মহারাজা সুইট ছিল তার ঠিকানা। বুধবার সেখানে বসে ঝুমা বললেন, ‘‘মাত্র এক মিনিট ৫৮ সেকেন্ড গানটা শুনতে শুনতেই শহর ছেড়ে পাড়ি দিলেন। জীবনে ভুলব না এই স্মৃতি।’’ গত কয়েক দিনের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণ ভিজে আসছে নার্সিং ডিরেক্টর লক্ষ্মী ভট্টাচার্য, নার্সিং সুপার প্রেমলতা বিশওয়াল, ফ্লোর ইন-চার্জ দীপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘গলার মতো তার ব্যবহারও ছিল মিষ্টি। কখনও বিরক্তি ছিল না।’’


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন