খালার বাড়িতে যা করতেন বাপ্পি, স্মৃতিকাতর চৌধুরী পরিবার


না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী। তার মৃত্যুতে সুরের দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করছেন সদ্য প্রয়াত বাপ্পিকে।
শিলিগুড়ির কোর্ট মোড় এলাকায় বাপ্পি লাহিড়ীর খালার বাড়ি। তিনি সেখানে গেলেই উৎসবের আমেজ তৈরি হতো। গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া আর ঘোরাফেরায় কীভাবে যে সময় কেটে যেত, টের পেতেন না চৌধুরী পরিবারের কেউ। আর তাই এই কিংবদন্তির প্রয়াণে সেই সোনালী দিনগুলিকেই স্মরণ করলেন খালার বাড়ির সদস্যরা।
মাত্র দুই বছর বয়স থেকেই খালার বাড়িতে যেতেন বাপ্পি লাহিড়ী। খালাতো ভাই ভবতোষ চৌধুরী ও বাপ্পি সেই বাড়িতে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। পরবর্তীতে কলকাতায় চলে আসেন বাপ্পি। এরপর পাড়ি দেন মুম্বাই। তবে যে প্রান্তেই থাকুক না কেন বছরে ৪-৫ বার খালার বাড়িতে যেতেন বাপ্পি। ২০১৭ সালে শেষবারের মতো সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।
জানা গেছে, শিলিগুড়িতে খালার বাড়ির দোতলায় বাপ্পির জন্য একটা আলাদা রুম রাখা ছিল। তিনি যখন শিলিগুড়ি যেতেন, তখন ওই রুমেই থাকতেন। এক তলায় বাড়ির ড্রয়িং রুমটাই ছিল তাদের আড্ডাখানা। মাছ খেতে ভালোবাসতেন এই কিংবদন্তি। তিনি গেলেই হরেক রকম মাছের রান্নার হিড়িক পরে যেত চৌধুরী বাড়িতে৷
বাপ্পি লাহিড়ী আর নেই, এ কথা বিশ্বাস করতেই পারছেন না চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা। আক্ষেপের সুরে তার বড় ভাই ভবতোষ চৌধুরী বলেন, 'গত বছর বাপ্পির শরীর খারাপের সময় দেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু হয়ে ওঠেনি। নিজেকে দোষী লাগছে।'
পরিবারের সদস্য ময়ুখ চৌধুরী জানান, 'উনি (বাপ্পি লাহিড়ী) বাড়িতে এলেই দিনভর আড্ডা হত। চলত গান বাজনা। আড্ডা বসত ড্রয়িং রুমে। উনি চা খেতে খুব ভালোবাসতেন। চায়ের টানে প্রায়শই কার্শিয়াং যেতেন। এছাড়াও জঙ্গলে ঘুরতে ভালোবাসতেন। শিলিগুড়ি এলেই ছুটতেন জঙ্গলে ঘুরতে৷'
শুধু খালার বাড়িতে নয়, বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুতে শিলিগুড়ির গেটবাজার রামঠাকুর মন্দিরেও নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। কেননা শিলিগুড়ি গেলেই তিনি ওই মন্দিরে ঘুরতে যেতেন। মন্দিরের কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। এমনকী মন্দিরের ফান্ডের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে অনুষ্ঠান করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হল না।
বাপ্পি লাহিড়ীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন মন্দির কমিটির সম্পাদক নিখিল সেন। তিনি বলেন, 'উনি (বাপ্পি লাহিড়ী) আমাদের গুরুদেবের আশ্রিত ছিলেন। তাই যখনই শিলিগুড়ি আসতেন, আমাদের মন্দিরে ঘুরে যেতেন। আমাদের সকলের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মারতেন। তিনি যে এত বড় একজন শিল্পী তা তাকে দেখলে বোঝাও যেত না। এখানে এসে চা খাওয়া, মন্দিরের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে খোঁজ নেওয়া, আবার চলে যাওয়ার আগে নিয়ম করে দান করে যেতেন। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
এইচকেআর
