জালিয়াতি মামলায় হিজলার পাঁচ প্রতারক কারাগারে


দলিল জাল-জালিয়াতির মামলায় বরিশালের হিজলা উপজেলার পাঁচ প্রতারককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ধার্য তারিখে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া পাঁচ প্রতারক হলেন- হিজলা উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামের মৃত হোসেন সরদারের ছেলে মো. শাহিন সরদার (৩০) ও মো. সজিব সরদার (২৫), একই গ্রামের মৃত শুক্কুর সরদারের ছেলে মো. সামসুল হক সরদার (৫০), কালাম সরদার (৪৫) এবং জামাল সরদার (৪০)। বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক মওদুদ আহম্মেদ জালিয়াতি চক্রের ওই পাঁচ সদস্যকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।
এর আগে জালিয়াতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ১০ অভিযুক্তর মধ্যে ওই পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে গত ১৯ জানুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বরিশাল জেলার পুলিশ পরিদর্শক মো. কবির হোসেন।
এদিকে, পিবিআই তদন্তে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম ও তার পরিবার। তাদের অভিযোগ মামলার ১০ নম্বর আসামি ভূমির দালাল হিসেবে পরিচিত মো. শাহিন খানের সহযোগিতায় জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে অভিযুক্ত আসামিরা। অথচ সেই শাহিন খানকে বাদ দিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অর্থের প্রভাবে অভিযুক্ত শাহিন খান নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ বাদী পক্ষের।
আদালতে নালিশি মামলার বিবরনে জানা গেছে, নরসিংহপুর এবং পশ্চিম কোরালিয়া মৌজার ৪.৫২ শতাংশ জমিতে বসবাস, চাষাবাদসহ ভোগ দখল করে আসছেন বাদী পক্ষ। অভিযুক্তরা ওই জমির মালিকানা দাবি করেন। এমনকি ভোগ দখলিয় জমি থেকে তাদের উৎখাতের জন্য নানানভাবে হুমকি দিয়ে থাকেন আসামিরা। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের মধ্যে সালিশ মিমাংসার আয়োজন করা হয়।
ওইদিন মামলার ১০ নম্বর আসামি শাহিন খান আসামিদের পক্ষে আদালতে মামলার রায়, এসি ল্যান্ড অফিসের নামজারী মোকাদ্দমা এবং খতিয়ানসহ বিভিন্ন প্রমাণপত্র উপস্থাপন করেন। কিন্তু সালিশে সেইসব কাগজপত্র জাল এবং ভুয়া প্রমাণিত হয়। এমনকি আদালতের রায়ের যেসব কাগজপত্র উত্থাপন করা হয়েছে তাও সম্পূর্ণ জাল বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬১ সালের ২০ জুন সম্পাদিত ৯৩২৩ নং দলিলের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর সহি মোহরীর নকল পাওয়ার আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয় থেকে জানানো হয় ‘মহফেজ খানার রেকর্ড পত্রে উল্লেখিত দলিলের সংশ্লিষ্ট মূল বালাম খাতা ছেড়া কাটা। বিধায় দলিলের গৃহিতার তথ্য ও সহি মোহরী নকল দেয়া হলো না।
তাছাড়া মেহেন্দিগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট ১১এম/২০১৩-১৪(১৫০) মামলার বিচারের লক্ষ্যে বরিশাল সাব-রেজিষ্টি অফিসে ১৯৬১ সালের ২০ জুন রেজিষ্ট্রিকৃত ৯৩২৩ নং দলিলের প্রত্যায়ন চাওয়া হয়। মহাফেজখানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দলিলের সাথে মূল বালামের দলিলের দাতা-গ্রহিতার কোন মিল পাওয়া যায়নি। শাহিন সরদারসহ অভিযুক্তরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরি করে আসল দলিল হিসাবে প্রকাশ করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
তবে অভিযোগের সাথে নুর ইসলাম সরদার, নুরুজ্জামান সরদার, নুরুল আমিন সরদার, মো. নুরু ইসলাম সরদার ও মো. শাহিন খানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। পিবিআই’র এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ আসামিকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে, বাদী অভিযোগ করেছেন, ‘দলিল জালিয়াতি এবং রেকর্ডপত্র গায়েবের কাজ ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট ছাড়া সাধারণ মানুষের করা সম্ভব নয়। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে শাহিন খান জালিয়াতি এবং প্রমাণ লোপটে সহযোগিতা করেছে। অথচ সেই শাহিন খানকে বাদ দিয়ে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ তদন্তের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি বাদী পক্ষের। তাই এ বিষয়ে বিচার বিভাগের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি তোলেন তারা।
কেআর
