সাড়ে চার বছর পর নিউরো সার্জন পেলো বরিশাল


দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর পরে নিউরো সার্জন পেলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এর ফলে অঘোষিত ভাবে বন্ধ থাকা এই বিভাগটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দক্ষিণাঞ্চলের সর্বো বৃহৎ এই হাসপাতালে নিউরো সার্জন পদায়োনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবের প্রতি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকসহ সুধিজনরা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ‘দক্ষিণ বঙ্গের সর্বোচ্চ এই শিক্ষা এবং চিকিৎসা কেন্দ্রটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে নিউরো সার্জারি বিভাগটি মুখ থুবরে পড়ে। এমনকি চিকিৎসক না থানায় এ অঞ্চলের রোগীদের চিকিৎসার জন্য যেতে হয়েছে ঢাকায়। আবার সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন অনেক রোগী।
মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের মে মাসে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগে যোগদান করেন ডা. সরোয়ার মোর্শেদ আলম। এর এক বছর পরেই অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২ আগষ্ট বরিশাল থেকে বদলি হয়ে যান নিউরোসার্জন ডা. সরোয়ার মোর্শেদ আলম। এরপর থেকেই শূণ্য থেকে যায় শেবামেকের নিউরো সার্জারি বিভাগের পদ। এমনকি সংকটের কারণে অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা সেবাও। তবে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর পরে হলেও সেই ক্লান্তিকাল কেটেছে শেবাচিম হাসপাতালের।
গত ১৩ জানুয়ারি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. অসীত বরণ নাথকে শেবামেকে পদায়ন দেয়া হয়েছে। জানা যায়, ডা. অসীত বরণ নাথ প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। কিন্তু ওই কলেজে নিউরো সার্জারি বিভাগ চালু নেই। নেই অস্ত্রপচারের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও। অনুশিলন না থাকায় কর্মক্ষমতাও হারাচ্ছিলেন ওই চিকিৎসক। তবে পটুয়াখালীতে কর্মস্থল হলেও তিনি বরিশালে এসে প্রাইভেট প্রাকটিস করতেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া’র বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। সম্প্রতি শেবামেক পরিদর্শনে আসেন তিনি। এসময় তার সাথে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সেখানে চিকিৎসকদের সাথে সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। উম্মুক্ত আলোচনায় দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর নিউরো সার্জারি বিভাগ বন্ধ থাকার দুঃখপ্রকাশ এবং বিভাগটি চালুর দাবি তোলেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিডি ও বর্তমান অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাশরেফুল ইসলাম সৈকত। তিনি পটুয়াখালীতে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বরিশালে পদায়নেরও দাবি তোলেন। তার এই দাবির প্রতি মত দিয়ে বিভাগটিতে একজন নিউরো সার্জন পদায়োনের দাবি আরও জোড়ালো করেন মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন।
আলাপকালে ডা. মাশরেফুল ইসলাম সৈকত বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে নিউরো সার্জারি বিভাগ থাকলেও চিকিৎসক থাকবে না ২০২২ সালে এসে এটা ভাবা যায় না। কেননা একজন নিউরো সার্জনের গুরুত্ব কতটা সেটা বোঝানো যাবে না।
তিনি বলেন, ‘কোন মানুষ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত বা রক্তক্ষরণ হলে খুব দ্রুতই তার অস্ত্রপচারের প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় এই হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয় ওইসব রোগীদের। কিন্তু বরিশাল থেকে ঢাকা পৌঁছতে যেসময় লাগে তাতে চিকিৎসার গোল্ডেন আওয়ার (স্বর্ণালী সময়) পেরিয়ে যায়। কেননা ঘটনার পরে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে কমকরে হলেও দেড় থেকে দুই ঘন্টা চলে যায়। এরপর বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে চলে যায় আরও ৭-৮ ঘন্টা।
আর যখন ঢাকায় পৌঁছে তখন আর রোগীকে বাঁচানো হয় না। অথচ এ ধরনের রোগীদের গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। একমাত্র হেলিকপ্টার ছাড়া রোগীকে ওই সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। আবার জীবনের এই অন্তীম মুহুর্তে এসে বৃত্তবানরাও অনেক সময় ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। যার জ্বলন্ত প্রমাণ বরিশাল সিটি’র সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন।
ডা. সৈকত বলেন, ‘আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে সদ্য সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ও বর্তমান স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদল স্যার এবং শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম স্যার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে যোগাযোগ রক্ষা করে একজন নিউরো সার্জন এই হাসপাতালে আনতে পেরেছেন।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একজন নিউরো সার্জনের বরই অভাব ছিলো এই হাসপাতালে। আমরা সেই অভাব কিছুটা হলেও দূর করতে পেরেছি। একজন নিউরো সার্জন এই হাসপাতালে পদায়ন করায় এখানকার মুমূর্ষ মানুষ সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা পাবেন। নিউরো সার্জারি বিভাগটির আরও উন্নয়নে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বলেন তিনি।
কেআর
