ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

হবিগঞ্জে বিরল প্রজাতির চিতা বিড়াল পিটিয়ে মারল গ্রামবাসী

হবিগঞ্জে বিরল প্রজাতির চিতা বিড়াল পিটিয়ে মারল গ্রামবাসী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন


হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বিরল প্রজাতির একটি চিতা বিড়ালকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন কচুয়া গ্রামবাসী। এ নিয়ে দুই সপ্তাহে দুটি বন্যাপ্রাণিকে হত্যা করেছেন গ্রামবাসীরা।
 
শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে কচুয়া গ্রামবাসী চিতা বিড়ালটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা মৃত বিড়ালটিকে উদ্ধার করেছে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে হঠাৎ কয়েকজন ব্যক্তি চিতা বিড়ালটিকে গ্রামের পাশে একটি ঝোঁপে দেখতে পান। এ সময় তারা এটিকে বাঘের বাচ্চা বলে গ্রামবাসীর মধ্যে প্রচার করলে শতশত গ্রামবাসী বিড়ালটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা এটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা মৃত বিড়ালটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্থানীয়রা এটিকে বাঘ আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলেছে। আবার অনেকে এটিকে মেছো বিড়ালও মনে করবে। কিন্তু এর প্রকৃত নাম হচ্ছে ‘চিতা বিড়াল’। এটি মেছো বিড়ালের চেয়ে একটু ছোট এবং সাধারণ বিড়ালের চেয়ে একটু বড় আকারের। ওজন প্রায় ৪ কেজি হয়ে থাকে। বিরল প্রজাতির এই প্রাণিটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট অঞ্চলে এটি কিছু রয়েছে। এটি কখনো কোন মানুষকে আক্রমণ করে না।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শেয়ালের কামড়ে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছিলেন। এরপর আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্যও স্থানীয়দের বলেছি। এরপরও তারা গত ৯ জানুয়ারি একটি শেয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় বন আদালতে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। এরপর ১৩ জানুয়ারি গ্রামবাসী বিরল প্রজাতির একটি গন্ধগোকুলকে ধরে নিয়ে আসে। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে এটিকে উদ্ধার করি।’ 

মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চিতা বিড়াল হত্যার ঘটনায় আমরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনায় মামলা হবে। তবে মামলাটি বন আদালত নাকি থানায় হবে এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি উপজেলার রাজারবাজার ও রাণীরকোট এলাকার ৬ জনকে কামড়ায় একটি শেয়াল। এরপর থেকে ওই দুটি গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অচেনা প্রাণী আতঙ্ক দেখা দেয়। এই প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজ নিজ ঘরে অবস্থানের জন্য মসজিদের মাইকে ঘোষণাও দেয়া হয়। এমনকি গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে রাতভর গ্রাম পাহারা দেন।

গত ৮ জানুয়ারি বিকালে চুনারুঘাট উপজেলার সারেরকোণা গ্রামে কবরস্থানের গর্ত থেকে এলাকাবাসী মেছো বিড়ালের দুটি শাবক ধরে আনেন। এ সময় মা বিড়ালটি পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ও বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুনরায় বাচ্চাগুলোকে আগের স্থানে রেখে দেয়। এদিন রাতেই মেছো বিড়ালটি নিজের শাবক দুটিকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়।

৯ জানুয়ারি কচুয়া গ্রামবাসী একটি শেয়ালকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে ১৩ জানুয়ারি আবারো বিরল প্রজাতির একটি গন্ধগোকুলকে ধরে আনেন স্থানীয়রা। যদিও বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এটিকে উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি এ ব্যাপারে বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করব। যেহেতু স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়েই বন্যাপ্রাণি ধরছে এবং মারছে, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে মার্কিং করা হবে। এছাড়া যে দুটি প্রাণিকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে মামলা হবে।


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন