‘সমালোচনামূলক পোস্ট’ মুছতে টুইটারকে বাধ্য করছে ভারত সরকার


ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। কদিন আগেই দৈনিক সংক্রমণের বিশ্বরেকর্ড তৈরি হয়েছে দেশটিতে। গত কয়েক দিন ধরে তিন লাখের বেশি মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ছে। সংকটের মুখে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলো তীব্র অক্সিজেন-সংকটে পড়েছে। খালি নেই সাধারণ ও আইসিইউ শয্যাগুলো। উপচে পড়ছে করোনা রোগীদের ঢল। যদিও গত নভেম্বরেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তখন ওই সতর্কবার্তায় কান দেয়নি নরেন্দ্র মোদির সরকার। তবে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির পর এবার সোশ্যাল মিডিয়ার মুখ চেপে ধরা হচ্ছে। টুইটারকে রীতিমতো নোটিস দিয়ে করোনা মোকাবিলায় সরকারের উদাসীনতা সংক্রান্ত পোস্টগুলো মুছে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এমপি থেকে বিধায়ক, অভিনেতা থেকে পরিচালক… মাইক্রোব্লগিং সাইটে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অনেকেই। বিষয়টি নজরে আসতেই টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের নোটিস ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় যে, এই ধরনের টুইট ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের পরিপন্থী। তারপরই টুইটারের তরফে সরকারের সমালোচনা করে লেখা মোট ৫২টি টুইট নিষিদ্ধ করা হয়, যাতে সেগুলো দেশের সাধারণ মানুষের নজরে না পড়ে।
যেসব হ্যান্ডেলের টুইট নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, এমপি রেবানাথ রেড্ডি, অভিনেতা বিনীতকুমার সিংহ, চিত্র নির্মাতা বিনোদ কাপরি এবং অবিনাশ দাসের হ্যান্ডেল।
কোভিড পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শয্যার অভাব, অক্সিজেন, ওষুধে ঘাটতি, কুম্ভমেলায় জনসমাগমের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে টুইট করেছিলেন তারা। মলয় লিখেছেন, ‘যেভাবে মহামারিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছেন, দেশের মানুষকে প্রাধান্য দেওয়ার বদলে যেভাবে অন্য দেশে টিকা পাঠাচ্ছেন, তার জন্য দেশ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা করবে না।’
এ নিয়ে টুইটারের তরফে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারও কোনও উচ্চবাচ্য করেনি বিষয়টি নিয়ে। তবে যাদের টুইট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে নোটিস পাঠিয়েছে টুইটার। তাতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের নির্দেশেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘন করেছেন ওই পোস্টদাতারা।
কোনও দেশের সরকারের নির্দেশে তারা কী কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি ওয়েবসাইটে সেই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য তুলে ধরে প্রযুক্তি সংস্থাগুলো। ভারত সরকারের এই নির্দেশের কথাও সেখানে তুলে ধরেছে তারা। তাতে জানানো হয়েছে, গত ২২ এবং ২৩ এপ্রিল তাদের টুইটগুলো নিষিদ্ধের নির্দেশ দেয় ভারত সরকার। প্রভাবশালীদের এসব টুইট দেশের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে; এমন আশঙ্কা থেকেই সরকারের তরফে এমন নির্দেশ দেওয়া হয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
টুইটগুলো অবশ্য এমনভাবে সরানো হয়েছে যে, ভারতেই শুধু সেগুলো দেখা যাবে না। অন্য দেশ থেকে সেগুলো ঠিকই দেখা যাবে।
ভারতে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মোদি সরকারের সমালোচনামূলক টুইট মুছে ফেলার ঘটনা সামনে এলো। এর আগে কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরোধিতায় পথে নামা লাখ লাখ কৃষকের আন্দোলন যখন ব্যাপ্তি পাচ্ছিল, সেই সময়ও একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। তখনও কৃষকদের সমর্থনকারী একাধিক টুইটার হ্যান্ডেল ব্লক করে দেওয়া হয়। সরকারের সমালোচনা করে লেখা বহু টুইট মুছে দেওয়া হয়।
/ইই
