ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

বরিশালে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ, কারণ খুঁজছে গবেষকরা

বরিশালে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ, কারণ খুঁজছে গবেষকরা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে এক মাস ধরে ডায়রিয়ার ভয়াবহ প্রকোপ চলছে। যদিও পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ খুঁজতে গবেষণা চালাচ্ছে দু’টি পৃথক গবেষণা দল।


স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পানিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া, খালে ও নদীর পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া, অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে এ বছর হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি জেলায় ডায়রিয়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। গত দু’সপ্তাহ ধরে বরিশাল অঞ্চলের ছোট বড় হাসপাতালগুলো করোনার পাশাপাশি ডায়রিয়ার রোগীতে সয়লাব হয়ে যায়।

মায়ের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে পটুয়াখালীর রোমেনা আক্তার বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমার মায়ের জন্য স্যালাইন পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না। পুরো জেলায় কোথায় পাওয়া যায়নি স্যালাইন।’

কর্মকর্তারা বলেন, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় তুলনামূলক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা: বাসুদেব কুমার দাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়ে বিশেষ করে এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। কিন্তু এবার তুলনামূলক অনেক বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে জাতীয় রোগ তত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) থেকে টিম এসে পরিস্থিতি দেখে কিছু কারণ উদঘাটন করেছে।’ তিনি আরো বলেন, এখনো আইইডিসিআরের একটি দল বরিশাল অঞ্চলে এ নিয়ে কাজ করছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে পরবর্তী এক মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক। আবার এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আক্রান্তের গতি আরো বেড়েছে। অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনে বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ৫৭৭ জন। তবে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেছেন, বেশ কিছু দিন পর এখন রোগীর চাপ কিছুটা কমে আসতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আইইডিসিআরের বিশ্লেষকরা অনেক দিন ধরে সবকিছু দেখেছেন ও তারা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করছেন। তবে এটা পরিষ্কার যে লবণাক্ত পানিতে জীবাণু বেশি সময় ধরে টিকে থাকে। আর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খাবারের জন্য গভীর নলকূপ আর গৃহস্থালি কাজের জন্য পুকুর, খাল কিংবা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল।

বাসুদেব কুমার দাস বলেন, এসব পানিতে জীবাণু পেয়েছেন ঢাকা থেকে আসা গবেষকরা। তবে তারা এখনো এসব নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, রোগীদের মধ্যে ৭১ ভাগ এসব পানি ব্যবহারের তথ্য দিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষকদের।

ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্যালাইন সঙ্কট মোকাবিলায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বরিশাল, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার জন্য বৃহস্পতিবার ৬০০ ব্যাগ আইভি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য ৩৫ হাজার স্যালাইন যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিবিসিকে বলেছেন, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭৯ জন ও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৫৭ জন। গত সাত দিনে ২০১৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত এক মাসে মোট চার ৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আজ থেকে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। এর আগে প্রতিদিন তিন শ’র মতো রোগী হাসপাতালে আসতো। শনিবার তা ১৭৯ জন এসেছে।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় জেলাজুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন