ফাঁসি দেওয়ার আগে ১০ বার চিন্তা করি: প্রধান বিচারপতি


প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘ফাঁসি দেওয়াটা সাংঘাতিক পেইনফুল (বেদনাদায়ক) আমাদের জন্য। সুতরাং কাউকে ফাঁসি দেওয়ার (সিদ্ধান্ত) আগে আমরা ১০ বার চিন্তা করি।’
বুধবার (১০ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গার একটি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঝড়ু ও মকিম নামের দুই আসামির করা নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
পরে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ দুই আসামির করা নিয়মিত আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে খারিজ করে দিয়েছেন।
এই দুই আসামির নিয়মিত আপিল ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। নিয়মিত আপিল নিষ্পত্তির আগে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে সেদিন দাবি করেন তাদের আইনজীবী। এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থেকে তাদের করা জেল আপিল ও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নামঞ্জুরের পর ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর হয়। ঝড়ু ও মকিমের করা নিয়মিত আপিলের শুনানি শেষে আজ সিদ্ধান্ত দেন সর্বোচ্চ আদালত। তাদের আপিলটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ৩ নম্বর ক্রমিকে ছিল।
৩ নম্বরের সঙ্গে কার্যতালিকায় থাকা ৭ নম্বর ক্রমিকের মামলাটি একসঙ্গে শুনানি করতে চান জানিয়ে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ৭ নম্বর আইটেমে সুজন নামে একজনের নিয়মিত আপিল আছে। তাঁর একটি জেল পিটিশন ছিল (৮/২০১৩)। সেই পিটিশনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ তাঁকে ইতিমধ্যে খালাস দিয়েছেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এই মামলায় (সুজনের) তিন আসামির মধ্যে দুজনের নিয়মিত আপিল ছিল। আর সুজনের জেল পিটিশন ছিল। নিয়মিত আপিল যাঁরা করেছেন, তাঁদের ফাঁসি হয়েছে। আর জেল পিটিশনের শুনানি নিয়ে আমরা ওকে (সুজন) খালাস দিয়েছি।
অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সেদিন দেখলাম, অনেকে বললেন ন্যায়বিচার হয়নি। আপিল নিষ্পত্তির আগে ফাঁসি হয়ে গেছে। তাহলে এখন ওই লোকটিকে (সুজন) যিনি, খালাস পেয়েছেন তাহলে কি তাঁকে ফেরত এনে আবার আপিল শুনানি করবেন?
ব্লেইম আসে, কোর্টের জন্য বিব্রতকর
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এই কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেইম আসে, যা আমাদের জন্য বিরাট বিব্রতকর। আমরা ফাঁসি দেওয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেওয়াটা সাংঘাতিক পেইনফুল আমাদের জন্য। সুতরাং হ্যাংগিং দেওয়ার আগে আমরা ১০ বার চিন্তা করি।’
বিচারপ্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনো ডিজিটাল সিস্টেম হয় নাই। ডিজিটাল করতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ডিজিটাল হলে সাথে সাথে ডিটেক্ট (শনাক্ত) হয়ে যাবে। এটা বড় সমস্যা। ডিজিটাল না হলে ডিটেক্ট করা সম্ভব না। কারণ, এখন আর কেউ কনভার্সনের (জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল এক হওয়া) দরখাস্ত দেন না। দেখেন সুজনের নিয়মিত আপিল রয়ে গেছে। অথচ জেল আপিলে তাঁর খালাস হয়ে গেছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১০২টি ফাঁসির মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০৯ সালের যেসব ফাঁসির মামলা বিচারাধীন ছিল, সেগুলো আমার আমলে শেষ হয়েছে।…২০১৩ সালের আপিল কেন কোর্টে মেনশন হলো না? ২০১৩ সাল থেকে আপিল পড়ে থাকল, আবেদন দিয়ে বলেনি আপিল পড়ে আছে, তাড়াতাড়ি শুনানি করা দরকার। আমি এসে সেকশনে নির্দেশ দিয়ে বলেছি, সব ফাঁসির মামলা পৃথক করতে। বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে আমি এটা করেছি। যাতে এসব মানুষের কষ্ট কম হয়।’
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, গরিব মানুষের মামলা এসে ধরাধরি না করলে আইনজীবী কোনো আবেদন দেন না। এমনকি মামলা পড়ে আছে, এটিও আদালতে নোটিশ করেন না।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোর্টের ওপর কোনো ব্লেইম দিইনি। হয়তো কোর্টে কিছু প্রভাব পড়ে গেছে। আমরা ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত কোর্টকে ব্লেইম করিনি। আমাদের আইনজীবীদেরও হয়তো ভুল হতে পারে, আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। সেকশনের আরও সমন্বয় করা উচিত। পাশাপাশি কারা কর্তৃপক্ষের জন্য একটা গাইড লাইন দিলে ভালো হয়।
এমবি
