দিন দিন বাড়ছে আমতলীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা


বরগুনার আমতলীতে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। গত ১ মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহাস্রাধিক ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলেও বেসরকারী হিসেবে এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুনেরও বেশী।
কলেরা স্যালাইনের ব্যাপক চাহিদা থাকা সও্বেও উপজেলার কোন ঔষধের দোকানে কলেরা স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছেনা। স্যালাইন না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ও তার স্বজনরা। ঔষধ কোম্পানীগুলো কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না করায় উপজেলাব্যাপী স্যালাইন শুন্য হয়ে পড়েছে বলে দাবী ঔষধ ব্যবসায়ীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, গত ১ মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ হাজার ৪৬ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও বে-সরকারী হিসেবে এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুনেরও বেশী। গড়ে প্রতিদিন ৫০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫৭ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেট না থাকায় অনেকে ফ্লোরে মাদুর ও চাদর বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করাচ্ছেন।
এপ্রিলের প্রথম দিকে উপজেলায় মহামারি আকারে ডায়েরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। শুরুর দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ রোগীদের কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করে আসছে। হাসপাতালে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীদের চাপ দেখে কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার কলেরা স্যালাইন মজুদ করে। গত এক মাসে সাড়ে ৪ হাজার ৫ শত স্যালাইন শেষ হয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে ডায়েরিয়া পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারন করা ও দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কলেরা স্যালাইনের প্রচুর চাহিদা তৈরী হয়। কিন্তু বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীগুলো চাহিদার তুলনায় কম স্যালাইন সরবরাহ করায় বাজারে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে বলে ঔষধ ব্যবসায়ীরা দাবী করেন। এতে গত শনিবার থেকে আজ (শুক্রবার ) পর্যন্ত উপজেলার শহরের কোন ঔষধের দোকানে কলেরা স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছিল না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতাল থেকে রোগীদের চাহিদামত কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে না। বাধ্যহয়ে বাহিরের ফার্মেসী থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। অথচ হাসপাতালের সামনের সকল ঔষধের দোকান ঘুরেও একটি স্যালাইন তারা পাচ্ছেন না। কোম্পানীগুলো চাহিদামত কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না করায় বাজার শুন্য হয়ে পড়েছে স্যালাইন।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেসহ পৌরশহরের বিভিন্নস্থানের ঔষধের দোকানগুলো ঘুরে দেখাগেছে, কোন দোকানেই কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ নেই। ঔষধ কোম্পানীর স্থাণীয় প্রতিনিধিরা দাবী করেন প্রয়োজনীয় কাঁচামাল না থাকায় চাহিদামত স্যালাইন উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারনে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। দ্রত এ সংকট কেঁটে যাবে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন ইব্রাহিম ও আঃ সত্তার বলেন, হাসপাতাল থেকে যে স্যালাইন দিয়েছে তা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। রোগীর অবস্থাও তেমন ভালো না। শুনেছি আমতলীর কোন ফার্মেসীতে কলেরা স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
অপর রোগীর স্বজন মালেকা ও জয়নব জানায়, আমতলী শহরের অধিকাংশ ঔষধের দোকান ঘুরেও একটিও কলেরা স্যালাইন পাইনি।
বেক্সিমকো ঔষধ কোম্পাণীর স্থাণীয় প্রতিনিধি মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল না থাকায় চাহিদামত স্যালাইন উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তাই উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আশাকরি ২/১ দিনের মধ্যে এ সংকট কেঁটে যাবে।
তালুকদার মেডিকেল হলের মালিক মোঃ শাহিন তালুকদার বলেন, বাজারে কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ নেই। কোম্পানীগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
রহমান মেডিকেল হলের মালিক মোঃ আবদুস সোবাহান বলেন, আমতলীর কোন ঔষধের দোকানে গত ৪ দিন ধরে কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ নেই। প্রতিদিন রোগীর স্বজনরা এসে স্যালাইন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মুনায়েম সাদ মুঠোফোনে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫০জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। রোগীর চাপ দেখে চলতি মাসের শুরুতে ৬ হাজার কলেরা স্যালাইন সংগ্রহ করেছি। অল্প কিছু স্যালাইন হাতে জমা আছে। আরো ১ হাজার স্যালাইনের চাহিদা চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারী স্যালাইনের পাশাপাশি ফার্মেসী থেকে কোম্পানীর স্যালাইন সংগ্রহ করার জন্য রোগীর স্বজনদের বলা হচ্ছে। শুনেছি বাজারেও স্যালাইন শূণ্য হয়ে পড়েছে। আশাকরি দ্রত এ সংকট দূর হবে।
এইচকেআর
