ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

বন্ধ মার্কেট,  চালু সার্ভিস!

বন্ধ মার্কেট,  চালু সার্ভিস!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বেলা ১২টার দিকে সেলিম আহমেদ মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর হাতিরপুলে মোতালেব প্লাজার সামনে এসে দাঁড়ান। তখনই তিনি তার পরিচিত দোকানে ফোন দেন। উদ্দেশ্য তার মোবাইল ফোনের চার্জের সমস্যা ঠিক করা। দোকানের কর্মচারী রাস্তার মাঝামাঝি ডিভাইডারে অপেক্ষমান ছিলেন। সেখান থেকে তার ফোন মার্কেটের ভেতরে পাঠিয়ে দেন ওই কর্মচারী। সেটি দেখে কিছুক্ষণ পর তাকে জানানো হয় সেটি ঠিক করতে লাগবে আধাঘণ্টা। অতঃপর তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।

অন্যদিকে অনলাইনে নানারকম পণ্যের ব্যবসা করেন তানিয়া। তিনি ভরদুপুরে গাউসিয়া এলাকায় অনেকগুলো ব্যাগ হাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হলে – তিনি বলেন অনলাইনের ব্যবসার কিছু টুকটাক জিনিসপত্র প্রয়োজন। তার জন্য আসা। কিন্তু মার্কেট তো বন্ধ তাহলে পাচ্ছেন কিভাবে – জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরানো পরিচিত দোকান তো ফোনে কথা বলে চলে আসছি নিতে।

সার্ভিস পাওয়া এমন ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রশ্নই জাগে মার্কেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে পাচ্ছে তা! রাজধানীর গাউসিয়া, হাতিরপুল এলাকার মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায় সেখানে লোকসমাগম। খোঁজ নিতেই জানা গেল- এরা সবাই মার্কেটের দোকানের কর্মী। তখন প্রশ্ন আসে – মার্কেট তো বন্ধ তাহলে এখানে কেন তারা? কয়েকজনের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ পালনের ঘোষণা দেয় সরকার। এসময় মার্কেট বন্ধের ঘোষণা থাকলেও শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন গাউছিয়া ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় শহর রাজশাহী, সিলেটসহ কয়েকটি শহরে মার্কেট খোলার রাখার দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন। দ্বিতীয় দফায় আবারও এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তখন সরকারি-বেসরকারি সব অফিসসহ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেননি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান শপিং মল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নিউমার্কেট এলাকার কয়েকজন পাইকারি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দফা লকডাউনে মার্কেট বন্ধ করা হলে গণপরিবহণ চালু ছিল। তখন জিনিসপত্রের ক্রেতা থাকায় অনেকেই মার্কেটের গেত বন্ধ করেও ভিতর থেকে পাইকারি মাল বিক্রি করেছেন। এখনও অনেকেই তাই করছেন। তবে সেই তুলনায় নয়। পরিচিত ক্রেতাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হয়।

বিক্রেতারা জানান,  করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের বিধি-নিষেধের কারণে পহেলা বৈশাখের ব্যবসা হয়নি। তারপর চলমান লকডাউনের কারণে ঈদ-কেন্দ্রিক ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। গতবার ঈদের সময় কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। এবার তাই কিছুটা লাঘব করার জন্য হলেও মার্কেট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ এই সার্ভিস দেয়। তবে সবাই দিচ্ছে না।

গাউসিয়ায় ইসমাইল ম্যানশনের সামনে দেখা যায়, সেই মার্কেটে অবস্থিত দোকানের কর্মীরা মার্কেটের সামনেই অপেক্ষমাণ। একজনের কাছে জানতে চাওয়া হলো – এখানে কেন আপনারা? তারা উত্তর দিলে এমনেই। একই দৃশ্য দেখা যায় মার্কেটের ওপর পাশের দোকানগুলোর সামনে। সেখানে ফুটপাথেই বসে ছিলেন তারা। দোকানের একজন কর্মীর কাছে জানতে চাইলে – তিনিও কোন জবাব দিলেন না। একটু পর মার্কেটের গেট খোলা হলে ১০-১২ জন কর্মী মার্কেটের ভেতরে চলে যান। এসময় নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকান আছে ওদের তাই যায়। এর বেশিকিছু তিনি বলতে রাজি হননি।

একই দৃশ্য দেখা যায় ইসমাইল ম্যানশন থেকে কিছুদূর গেলে ইস্টার্ন মল্লিকার সামনে। সেখানে মূল প্রবেশ পথ বন্ধ থাকলেও, এটিএম বুথের পাশের ছোট একটি গেট খোলা ছিল এবং সেখানে নিরাপত্তারক্ষী দোকানের কর্মীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। আবার কিছু কর্মী হাতে করে দোকানের বিক্রয়ের মাল হাতে করে নিয়ে বের হচ্ছেন। তার কাছে জানতে চাইলে নিজেকে দোকানের কর্মী পরিচয় দেন এবং বলেন এগুলা অর্ডারের মাল। এসময় নিরাপত্তারক্ষীর কাছে দোকান খোলা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান – ভিতরে দোকানের মালিক কিনা, নাহলে কিছু বলতে রাজি না। এসময় মার্কেটের ভেতরেও অনেকেকে অবস্থান করতে দেখা যায়। 

গাউসিয়া এলাকা থেকে বের হয়ে হাতিরপুল এলাকা গিয়ে দেখা যায় মোতালেব প্লাজার সামনে এবং ইস্টার্ন প্লাজার সামনে একই রকম অবস্থা। দোকানের কর্মীরা এবং মোবাইল টেকনিশিয়ানরা বসে আছেন ডিভাইডারের ওপরে। জানতে চাইলে নাসিম নামের একজন টেকনিশিয়ান জানান, মার্কেট বন্ধ। কিন্তু আমাদেরও চলতে হয়। মোবাইল একটি জরুরি জিনিস , কিছু হলেই মানুষের টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বলতে গেলে মোবাইল ছাড়া মানুষ অচল। এই মার্কেটে অনেক দোকান। সবাই বসা। কারো কাজ নাই। দিনে দুই চারটা যাই আসে তা দিয়েই চলতে হচ্ছে এখন।

পাশেই আরেকজন টেকনিশিয়ান বলেন, করোনায় এখন সবারই অবস্থা খারাপ। মার্কেট বন্ধ করে আরও খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে। দৈনিক কোন আয় নাই।

এই এলাকার স্থানীয়রা জানান, যারা বসে আছে এরা সবাই মোবাইল টেকনিশিয়ান, সবারই মার্কেটে দোকান আছে। বাইরে দুই চারজন কাস্টমার আসে তারা ভিতরে মোবাইল পাঠায় দেয় ঠিক করার জন্য।  


/ইই
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন