বরিশালের তিনসহ ১৩ জেলায় শনাক্ত শূন্য


টানা চার সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেও দেশের বেশির ভাগ জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। কোনো কোনো জেলায় তা ৩৫ শতাংশেরও ওপরে ছিল। তবে মাস শেষে এখন বেশির ভাগ জেলাতেই শনাক্তের হার নেমে এসেছে ৫ শতাংশের নিচে। এমনকি গতকাল বৃহস্পতিবারের হিসাব অনুসারে ১৩টি জেলায় শনাক্তের হার শূন্য ছিল। আর কোনো জেলাতেই ১০ শতাংশের ওপরে ছিল না। যদিও গত সপ্তাহে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোনো কোনো জেলায় শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের ওপরেও ছিল। শনাক্তের হার শূন্য থাকা ১৩টি জেলা হলো খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও সুনামগঞ্জ।
এদিকে সংখ্যার দিক থেকে এখনো সবচেয়ে বেশি শনাক্ত ঢাকায়। সব মিলিয়ে সাত মাস পরে শনাক্তের হার নেমেছে ৪ শতাংশের নিচে (৩.২৪ শতাংশ)। এটা বেশ স্বস্তিদায়ক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার তুলনায় যে প্রায় ৯৭ শতাংশের রেজাল্ট নেগেটিভ আসছে, তাদের উপসর্গের কারণ খুঁজতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে শেষ ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন ২৬ হাজার ৭৪৪ জন। তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচ হাজারের মতো ছিলেন বিদেশগামী। বাকিরা সবাই আসেন করোনার মতো উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাতে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়ে আরো পাঁচটি বিষয় জোর দিয়েই মনে করিয়ে দিচ্ছেন—গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার টানা ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে আটকে থাকার পরও তা পরে দৌড়ে ওপরে উঠে যায়। জনসংখ্যার এখনো বড় একটি অংশই টিকার বাইরে রয়েছে। এখন যেসব এলাকায় তুলনামূলক বেশি সংক্রমণ আছে সেই এলাকাগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা; অনেক দেশেই বেশির ভাগ মানুষের টিকা দেওয়ার পরও হঠাৎ হঠাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং টিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মানুষকে সতর্ক বা সজাগ রাখা। বিশেষজ্ঞরা এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আগামীর ঝুঁকি এড়াতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে আমরা এখন স্বস্তির পর্যায়ে আছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা একেবারে করোনাকে বিদায় করে ফেলেছি বা ঝুঁকিমুক্ত আছি। এখনো কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় শনাক্ত ওঠানামা করছে। খুব একটা স্থির থাকছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের এখন কিছু কাজ করা জরুরি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—যে এলাকায় শনাক্ত রোগী পাওয়া যায় সেই এলাকায় প্রত্যেক রোগীকে স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থাপনায় আনা। শুধু পজিটিভ শনাক্ত করে রেখে দিলেই হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত সপ্তাহের ২০-২৬ সেপ্টেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সাত দিনে মোট শনাক্ত হন সাত হাজার ৮৭৫ জন, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় দুই হাজার ৯৬০ জন কম ছিল। মৃত্যুও কম হয় এই সপ্তাহে, ১৭৪ জন। আগের সপ্তাহের তুলনায় ৮১ জন কম। শনাক্তের হার কমেছিল ২৭.৩২ শতাংশ এবং মৃত্যুহার কমেছিল ৩১.৭৬ শতাংশ।
অন্যদিকে ওই সপ্তাহে ২৯ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বোচ্চ ১৫.৮৮, পঞ্চগড়ে ১৪.৫৭ এবং নিলফামারীতে ১১.৮৩ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। বাকি জেলাগুলোতে ছিল ৫ শতাংশের নিচে। এদিকে গতকাল পাওয়া তথ্য অনুসারে ১৩ জেলায় দৈনিক শনাক্তের হার ছিল শূন্য অর্থাৎ আগের ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলাগুলোতে বিভিন্ন সংখ্যায় মানুষের পরীক্ষা হলেও কারো মধ্যেই করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। বাকি ৫৪ জেলাতেই বিভিন্ন হারে শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ ছিল লক্ষ্মীপুরে, ৯ শতাংশ শরীয়তপুরে, ৮ শতাংশ করে নেত্রকোনা ও পঞ্চগড়ে, ৭ শতাংশ করে রাজশাহী ও ময়মনসিংহ জেলায়। ঢাকার কাছে মুন্সীগঞ্জে ছিল ৫.৪০ শতাংশ।
সংখ্যার দিক থেকে ঢাকা মহানগরীতে শনাক্ত হয়েছে ৪৬৬ জন। এ ছাড়া বাকি প্রতিটি জেলাতেই রোগী শনাক্ত ৫০-এর নিচে। অনেক জেলাতে রোগী পাওয়া গেছে এক থেকে দুজন। তবে গতকালের হিসাব অনুসারে দেশে মোট পজিটিভ রোগী ছিল ১২ হাজার ৪৬০ জন। শনাক্ত কমায় স্বাভাবিকভাবেই দেশের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে করোনা রোগী কমছে। গতকাল ভর্তি থাকা মোট রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে জেনারেল বেডে ছিল দুই হাজার ২৩১ জন, আইসিইউতে ছিল ৩৮২ জন ও হাইফ্লোতে ছিল ১৮০ জন।
এমবি
