ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

শেবাচিমের বর্জ্য অপসারণ ও করোনা ওয়ার্ডে লিফট স্থাপনের নির্দেশ

শেবাচিমের বর্জ্য অপসারণ ও করোনা ওয়ার্ডে লিফট স্থাপনের নির্দেশ
বরিশাল সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মহামারি করোনাকালিন সময়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল।

সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস এবং বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সহ জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তিনি।

পরিদর্শন পরবর্তী তিনি সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং করোনা ও ডায়রিয়া আক্রান্তসহ সকল ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার। এসময় হাসপাতালের নানামুখি সংকট আর সমস্যার কথা শুনে বিস্মিত হন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।

পৃথক দুটি মতবিনিময় সভা এবং হাসপাতাল পরিদর্শনকালে অন্যান্যদের মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন, বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। তিনি হাসপাতালের ডায়ারিয়া ওয়ার্ডসহ পুরাতন ভবনে বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত খোঁজ খবর নেন।

পরে বিভাগীয় কমিশনার হাসপাতালের পুর্বপাশে নতুন ভবনে করোনা ইউনিটের খোঁজ খবর নেন। পাশাপাশি করোনা ইউনিটে রোগীর চাপ বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নেন বিভাগীয় কমিশনার। এর আগে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে চিকিৎসকদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি।

এসময় বিভাগীয় কমিশনারের নিকট হাসপাতালের বিভিন্ন সংকট, সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা। পাশাপাশি এগুলো দ্রুত সমাধান করে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তারা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা মতবিনিময়কালে বলেন, ‘এ হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের পাশাপাশি তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ব্যাপক সংকট রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী। করোনা রোগীর অধিক চাপ বেড়েছে। করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বপালন করা চিকিৎসক এবং নার্সরা কোয়ারেন্টাইনে থাকার ফলে চিকিৎসক ও সাপোটিং স্টাফের ঘাটতি থাকছে।

তারা আরও বলেন, ‘করোনা ওয়ার্ডে লিফট না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। আবার করোনা ওয়ার্ডের মধ্যে থেকেও ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অতিমাত্রায় নোংরা হচ্ছে করোনা ইউনিটটি।

তাছাড়া প্রায় বছর ধরে শেবাচিমের বর্জ্য অপসারণ করছে না সিটি কর্পোরেশন। এর ফলে গোট হাসপাতাল ক্যাম্পসে দুর্গন্ধসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউ বেডের চরম সংকট রয়েছে। আবার আইসিইউসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য নেই দক্ষ টেকনিশিয়ান। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি।

বিভিন্ন সংকট এবং সমস্যার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে করোনা মহামারি প্রতিরোধে এক সাথে কাজ করবো। সবাই নিজের স্থান থেকে দেশকে ভালোবেশে দেশের মানুষের সেবা করার চেষ্টা করবেন। আমি হাসপাতালের যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে সে বিষয় নিয়ে ঢাকায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করবো।

পাশাপাশি আগামী সাত দিনের মধ্যে শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডে লিফট স্থাপনে গণপূর্ত বিভাগকে এবং হাসপাতাল চত্ত্বর থেকে বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।

এদিকে, শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শন এবং মতবিনিময় শেষে বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতাল পরিদর্শনে যান বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। সেখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ড পরির্দশন করেন তিনি। কথা বলেন সেখানে চিকিৎসাধীন রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ প্রতিরোধক টিকা প্রদান কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ খবর নে বিভাগীয় কমিশনার।

প্রসঙ্গত, ‘গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরে বরিশালে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে বিভাগ জুড়ে।

এর ফলে হাসপাতালগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। তাদেরকে ওয়ার্ডের বাইরে সামিয়ানা টাঙিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব বিষয় প্রত্যক্ষ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যান বিভাগীয় কমিশনার।


কে.আর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন