ঢাকার কারখানার ব্যবস্থাপক এখন পিরোজপুরে চায়ের দোকানি


মানুষের জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা। কত মানুষ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন অনেকেই। তেমনই একজন বিনয় দত্ত (ছদ্মনাম) (৫৩) কাজ করতেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিসেবে। একমাত্র মেয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংসার চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু করোনার দুঃসময় কেড়ে নিয়েছে তার সচ্ছল থাকার চাকরিটি। নিভে গেল সংসারের সব হাসি।
কিন্তু জীবন তো থেমে থাকার নয়। তাই ঘুরে দাঁড়াতে নতুন সংগ্রাম শুরু করেছেন অবিনাশ বৈদ্য। পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কে এলজিইডির সামনের একটি সড়কের পাশে দিয়েছেন ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। দোকানটির নাম দিয়েছেন ‘টি কর্নার’। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী।
বিনয় দত্ত জানান, করোনার কারণে ২০২০ সালে পোশাক কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই বেকার হয়ে পড়েন। পরিবার ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য পাড়ি জমান পিরোজপুরে। পড়াশোনার সুবাদে শহরটি আগেই পরিচিত ছিল। তাই দেড় হাজার টাকায় ভাড়া নেন পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের পাশে একটি ছোট ঝুপড়ি। এরপর দুই হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে সেখানে শুরু করেন চা বিক্রি। পরে চায়ের পাশাপাশি শুরু করেন রুটি ও ডাল-ভাজিও বিক্রি।
তিনি আরও জানান, করোনায় চাকরি চলে যাওয়ার পরও আমার কাছে যে টাকা ছিল, আমি তা দিয়ে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলাম। একটা সময় না পেরে নিজের এলাকায় চলে আসতে হলো। কিছু তো করে চলতে হবে, তাই এই ছোট চায়ের দোকান দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি। এখন দোকান ভালোই চলতেছে, ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
এভাবেই পেট চালাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমাদের মতো যারা চাকরী হারা আছে তাদের দিকে একটু সদয় দৃষ্টি দিয়ে সহযোগীতা করে সাবলম্বী করার কোন সুযোগ যদি থাকে। আমি আমার এই অবস্থানের জন্য বিন্দু পরিমান মনোবল হারাইনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবং আমি এই ছোট চায়ের দোকান থেকে বড় কিছু করার যোগ্যতা রাখি। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে আমি এটা করতে পারছি না। বিপদগ্রস্থ অবস্থায় ভেঙে পড়লে সে অবস্থা থেকে উত্তরন হওয়া যায় না। আমার মনোবল আছে, আমি আশা করি আমি আমার সেই আগের অবস্থানে ফিরতে পারব।
বিনয় দত্তের স্ত্রী মিতা দত্ত (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা ঢাকায় যখন ছিলাম, তখন খুব ভালো ছিলাম। হঠাৎ আমার স্বামীর চাকরি চলে যায়। যে কারণে আমরা খুব বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তারপর আমরা পিরোজপুরে চলে আসি। এখানে আসার পরে আমাদের পাশে কেউ ছিল না। আমাদের এক আপা সহযোগিতা করলে আমরা এখানে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান দিই।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি গ্রাহককে সন্তুষ্ট রাখতে। দূর থেকে অনেকেই আসে আমাদের চা খেতে। আর একটু সহযোগিতা পেলে ব্যবসাটা আরও বড় করতে চাই। আমাদের মতো বিপদগ্রস্তদের জন্য যদি প্রধানমন্ত্রী মুখ তুলে তাকাতেন, তাহলে হয়তো আবার সংসারটা সাজাতে পারব।
দোকানে আসা এক ক্রেতা জানান, এ দম্পতি এখানে অনেক দিন ধরে এখানে চা বিক্রি করেন। তাদের আপ্যায়নব্যবস্থা অনেক ভালো লেগেছে। তাদের রান্না করা খাবার খেতে ভালো লাগে বিধায় এখানে খেতে আসি। তাদের অনেক সুনাম রয়েছে। তদাই দিনরাত মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে চা খেতে আসে। এত বড় চাকরি হারিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হাই হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে জানান, এই করোনার মধ্যে চাকরি হারিয়ে শিক্ষিত একজন ভদ্রলোক ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দিয়ে পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতাকে স্বাগত জানাই। সরকারের কাছে আবেদন করি, তাকে যেন সহযোগিতা করা হয়।
বিনয় দত্ত জানান, সুযোগ পেলে আবার চাকরি করতে চান। তবে যত দিন কোনো চাকরি না পান, এই চায়ের দোকানটি ভালোভাবে চালাতে চান। তার মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন। তখন হয়তো আর চা বিক্রি করতে হবে না বলে স্বপ্ন দেখেন।
এইচেকআর
