জমি দখলে পীর সাহেবরা মুরিদদের দিয়ে কী করে দেখুন : হাইকোর্ট


ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা ৪৯টি মামলার বাদীর নামের তালিকা ও এ সংক্রান্ত সিআইডির প্রতিবেদন দেখে হাইকোর্ট বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, বাংলাদেশে পীর সাহেবের কাণ্ড দেখুন। জায়গা-জমি দখলের জন্য পীর সাহেবরা অনুসারী-মুরিদ দিয়ে কী করে দেখুন। সম্পত্তির জন্য তথাকথিত মুরিদ দিয়ে মামলা করিয়েছেন। পীর সাহেবের কেরামতি দেখুন। জায়গা জমির জন্য মুরিদ দিয়ে মামলা করবে-এটা কি কোনো কথা হলো! মুরিদের ঠিকানা দিয়ে মামলা করেছে। একজন মানুষের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিলেই তো তার জীবন শেষ হয়ে যায়। সেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলা? এটাতো মারাত্মক ব্যাপার।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ মন্তব্য করেন। আদালতে কাঞ্চনের পক্ষে অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার উপস্থিত ছিলেন। কাঞ্চনের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বাদী আফজাল হোসেনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অজি উল্লাহ। আদালত শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন।
হাইকোর্ট গত ১৪ জুন এক আদেশে একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দাখিল করা ৪৯টি মামলার বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই ৪৯টি মামলার বৃত্তান্ত নিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মামলার বাদীর পরিচয়পত্র দাখিল বাধ্যতামূলক করে ৫ দফা নির্দেশ দেন। এই নির্দেশে সিআইডি বিষয়টি তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। আজ এ প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত মন্তব্য করেন।
সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলো সম্পর্কে প্রকাশ্য ও গোপনে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অধিকাংশ মামলার বাদী, সাক্ষী, ভুক্তভোগীরা কোনো না কোনোভাবে রাজারবাগ দরবার শরিফ এবং ওই দরবার শরিফের পীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজারবাগের দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমান এবং তার অনুসারীরা তাদের দরবার শরীফের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিরীহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে আসছে বলে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।’
শুনানিকালে অ্যাডভোকেট অজিউল্লাহ হাইকোর্টকে জানান, ২০ মামলার মধ্যে মানবপাচার, মারামারি, এসিড নিক্ষেপের ৫ মামলার বাদী হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছেন তার কপি পাওয়া যায়নি। অপরপক্ষের আইনজীবীও আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান। এ অবস্থায় হাইকোর্ট শুনানি এক সপ্তাহের জন্য মুলতবি রেখে আইনজীবীদের সিআইডির অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি আপিল বিভাগের নজরে আনতে বলেন।
ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করে বলেন, তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা করা হয়। কিন্তু একটি মামলারও বাদী খুঁজে পাওয়া যায়নি-এই বিবেচনায় তাকে ৩৬টি মামলায় নিম্ন আদালত থেকেই খালাস দেওয়া হয়েছে। ১৩টি মামলা এখনও বিচারাধীন। তবে এসব মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। সবমিলে ওইসব মামলায় ১ হাজার ৪৬৫ দিন কারাভোগ করেছেন। রিট আবেদনে তার বিরুদ্ধে করা সব মামলায়ই গায়েবী ও ভুয়া দাবি করা হয়। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। এই রুল এখন বিচারাধীন।
এমবি
