ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news
বিষখালীর আকস্মিক ভাঙনে 

১৫ মিনিটে আশ্রয় কেন্দ্র ও মসজিদ নদীতে বিলিন: ছাত্র নিখোঁজ

১৫ মিনিটে আশ্রয় কেন্দ্র ও মসজিদ নদীতে বিলিন: ছাত্র নিখোঁজ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির নদী তীরের মানুষ ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ মানুষই তখন জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেয় সাইক্লোন সেল্টারে। প্রাণরক্ষাকারী সেই সাইক্লোন সেল্টারই নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। 

মঙ্গলবার বিষখালী নদীর আকস্মিক ভাঙনে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের একাংশ ও পাশের একটি মসজিদ নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনের ছবি তুলতে গিয়ে নদীতে পড়ে এক স্কুলছাত্র নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানান, পশ্চিম দেউরী এলাকা দীর্ঘদিন ধরে বিষখালী নদীতে ভাঙছে। হুমকির মুখে ছিল সাইক্লোন সেল্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বসতঘর ও ফসলি জমি।

 বেজমেন্টে মাটি সরে যাওয়ায় সাইক্লোন সেল্টারটি শুধু পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল।গত দুই দিনধরে নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে এই এলাকায় আকস্মিকভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যে নদী তীরের সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষ নিয়ে একাংশ ভেঙে বিলিন হয়ে যায়। ভবনের বাকি অংশ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। একই সময় একটি মসজিদ নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনের কারণে ফাটল ধরেছে বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনে। এতে বিদ্যালয়টির প্রায় তিন শত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পরবে, অন্যদিকে,ঝড়-বন্যায় পোনাবালিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের আশ্রয়ের কোন স্থান থাকবে না। 

এদিকে ভাঙনের ছবি তুলতে গিয়ে নেয়ামত উল্লাহ হাওলাদার (১৫) নামে স্থনীয় এক যুবক নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়। সে পশ্চিম দেউরী গ্রামের আবদুল বারেক হাওলাদারের ছেলে ও স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। নিখোঁজ যুবকের এখনো কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন। নিখোঁজ শিক্ষার্থীর উদ্ধারে বরিশাল ফায়ারসার্ভিসের ডুবুরিদল উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

খবর পেয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেকন নাহার স্পিডবোটে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ২০১৪ সালে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যায়ে বিষখালী নদী তীরে এ সাইক্লোন সেল্টার কাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা দ্বিতীয় তলায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে কয়েকজন শিক্ষক বসে বৈঠক করছিলাম। এরই মধ্যে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। ১৫ মিনিটের মধ্যেই স্কুলটির একাংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যাচ্ছে। আমরা নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিনটি কক্ষ ভেঙে নদীতে চলে যায়। এর পাশেই একটি মসজিদও নদীতে বিলিন হয়।  

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল মীর বলেন, এ ঘটনার ছবি তোলার সময় একটি ছেলে ভাঙনের তীব্রতায় নদীতে তলিয়ে যায়। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ এলাকার নদীর তীরের বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার আর জায়গা রইলো না। আমরা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।  ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ভাঙনে পশ্চিম দেউরী এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুনে পরিদর্শন করলাম। 

বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশাকরি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  এ ব্যাপারে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, পশ্চিম দেউরী এলাকায় নদীর আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা আগেই এখানের জন্য প্রকল্প তৈরি করে পাঠিয়েছি। এখন যেহেতু আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়েছে, তাই জরুরী ভিত্তিতে এ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে। 
 


এইচেকআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন