বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরঘুমে সাহসী শিক্ষিকা মাহরিন


রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত বিমানটির আগুন থেকে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী (৪২)। তার চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা বের হতে পারলেও বিমানের আগুনে গুরুতরভাবে দগ্ধ হন তিনি। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হয়েছে সাহসী এই শিক্ষিকাকে।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। পাশে দাদা জমিদার মজিবর রহমান চৌধুরী ও দাদি রওশনারা বেগম কবর।
ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গাউসুল আজম জামে মসজিদে মাহরিন চৌধুরীর প্রথম জানাজা হয়।
মা হারানোর শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন মাহরিন চৌধুরী দুই সন্তান আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী। স্ত্রী হারানোর শোকে কাতর স্বামী মনসুর আলী হেলাল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহরিনের স্বামী মনসুর আলী হেলাল বলেন, শেষ রাতে হাসপাতালে ওর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। আইসিইউতে শুয়ে শুয়ে ও আমার হাত নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরেছিল। বলেছিল, আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমি ওর হাত ধরতে গিয়েছিলাম, কিন্তু শরীরটা এমনভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে, ঠিকভাবে ধরতেও পারিনি।
তিনি আরও বলেন, আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না?’ সে বলেছিল, ‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’ আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ওকে বাঁচাতে, কিন্তু পারিনি। আমার দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা এতিম হয়ে গেল।
মনসুর হেলাল বলেন, ও অনেক ভালো মানুষ ছিল। ওর ভেতরে একটা মায়া ছিল সবাইকে ঘিরে। আগুন লাগার পর যখন অন্যরা দৌড়াচ্ছিল, ও তখন বাচ্চাদের বের করে আনছিল। কয়েকজনকে বের করার পর আবার ফিরে গিয়েছিল বাকি বাচ্চাদের জন্য সেই ফেরাটা আর শেষ হয়নি। সেখানেই আটকে পড়ে, সেখানেই পুড়ে যায় আমার মাহরিন।
মাহরিনের দুই ছেলে আয়ান রহীদ মিয়াদ চৌধুরী ও আদিল রহীদ মাহিব চৌধুরী বলেন, “আমরা গর্বিত, আমাদের মা নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে, আমাদের কথা চিন্তা না করে, জীবনের ঝুাঁকি নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের মা একজন আসল যোদ্ধা।
এইচকেআর
