মেসির স্বপ্ন কোপা, নেইমারেরও নয় কি?


কোপা আমেরিকা কিংবা বিশ্বকাপ; যাই আসুক না কেন, প্রতিবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ঘুরে ফিরে সামনে উঠে আসে সেই এক প্রশ্ন, ‘মেসির স্বপ্ন সত্যি হবে তো?’
মেসির মতো তাকেও যে বড় টুর্নামেন্ট বঞ্চিত রেখেছে সমানে। নেইমারের এই না পাওয়ার গল্প অবশ্য নিজের ব্যর্থতা নয়। এ পর্যন্ত চোটের কারণেই টুর্নামেন্ট মিস করেছেন বেশ কয়েকটা, ছিলেন না বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে, পরের কোপা আমেরিকায় লাল কার্ড দেখে পেলেন নিষেধাজ্ঞা, এরপরের কোপায় চোট। গেলবার দল শিরোপা জিতেছে, সে উৎসবেও ছিল না নেইমারের উপস্থিতি, মেটাটার্সাল হাড় ভেঙে যে তিনি টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন।
ফলে জাতীয় দলের জার্সিতে এখন পর্যন্ত তার সাফল্য বলতে আছে কেবল সেই ২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপ। যে প্রতিযোগিতা দুই বছর আগে ফিফা থেকেই বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেও সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেয়ে পরের বিশ্বকাপের পোশাকি মহড়াই যেন চলত বেশি। সেই টুর্নামেন্টকে এখন আর ‘মেজর’ ধরবেন কিনা প্রশ্ন আপনার কাছে।
অথচ জাতীয় দলে নেইমারের পরিসংখ্যান দেখুন। এখন পর্যন্ত করেছেন ৬৮ গোল, কত গোল করিয়েছেন তার তো ইয়ত্তাই নেই! আর ম্যাচ দশেক খেললে যে পেলেকে টপকে বনে যাবেন ব্রাজিলের শীর্ষ গোলদাতা, তা নিয়ে কোনো সন্দেহই থাকার কথা নয়। সেই নেইমারের নামের পাশে এখন পর্যন্ত কোনো ‘মেজর’ শিরোপা ছাড়া এক কনফেড কাপ বিষয়টা যেন বড্ড বেমানান।
সেই নেইমারই এবার পারফর্ম করে, করিয়ে ব্রাজিলকে নিয়ে এসেছেন আরও একটা কোপা আমেরিকার ফাইনালে। এবার শিরোপা জিতলে নেইমারের ব্রাজিল ধরে ফেলবে রোনালদো, রোনালদিনহো-যুগের ব্রাজিলকেও। ২০০৪ আর ২০০৭ সালে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়ে টানা দুই কোপা আমেরিকা জিতেছিল দলটা। সে হাতছানি এবার তিতে-নেইমারের ব্রাজিলের সামনে। স্বর্ণযুগের সে ব্রাজিলকে অন্তত একটা দিক থেকে ছুঁয়ে ফেলার হাতছানিটা যে কম কিছু নয়।তবে সেটা একপাশে রেখে নেইমার নিশ্চিতভাবে চাইবেন ম্যাচটা জিততে। তাহলেই যে মেজর টুর্নামেন্টের আক্ষেপ ঘুচে যায় তার।
মেসির গল্পটা শেষ বছর সাতেকে আপনি কম শোনেননি। তার দল খেলেছে তিনটা মেজর ফাইনালে জেতেনি একটিও, আক্ষেপের গল্পটাও আপনি শুনেছেন বহুবার। এবারের গল্পটা আক্ষেপের না হোক, এমন কিছুর প্রাণান্তকর চেষ্টাটা যে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
দু’জনে এ পর্যন্ত কম কিছুও করেননি বটে। মেসি এ পর্যন্ত করেছেন চার গোল, করিয়েছেন আরও পাঁচটি, সেমিফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পেনাল্টিটা নিয়েছিলেন। এর আগে আর্জেন্টিনার প্রত্যেকটা গোলে ছিল তার প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান। তার করা, কিংবা গড়ে দেওয়া ছাড়া আর্জেন্টিনা করেনি একটা গোলও।
অন্যদিকে নেইমার, করেছেন দুই গোল, যোগান দিয়েছেন দলের তিন গোলে। তবে প্রত্যক্ষ অবদানের বাইরে পরোক্ষভাবে ব্রাজিলের খেলা কম গড়ে দেননি পিএসজি তারকা। গ্রুপ পর্বের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় নেইমারকে শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ তিতে। সেই ম্যাচেই দল করেছিল ড্র। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দলে তাই নেইমার আর মেসির প্রভাবটা খুবই পরিষ্কার।
অভিজ্ঞতা তো আছেই, সঙ্গে আছে দুজনের মুদ্রার উল্টোপিঠের মতো একে অপরকে চেনার বিষয়টাও। একে অপরের শক্তিমত্তা আর দুর্বলতাটাকে দেখেছেন খুব কাছ থেকে। সে জ্ঞানটা নিজেরা তো কাজে লাগাবেনই, দলেও কি ছড়িয়ে দেবেন না তারা?
ফাইনালের আগে তাই দুজনের সবই পাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব; পারফর্ম্যান্স, অভিজ্ঞতা, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা… সবই। কালকের ফাইনাল শেষে হবে একজনের স্বপ্নপূরণ। সেটা নির্ভর করছে যে এ দু’জনের সাফল্য ব্যর্থতার ওপরই!
এইচকেআর
