ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ৫০

কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ৫০
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে খুলনা মহানগরের রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।

প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের কুয়েট মেডিকেল সেন্টারসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন। মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে তারা মিছিল বের করেন। 

পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। দুপুরে শিক্ষার্থীরা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করেন। পরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে কুয়েট পকেট গেটের বাইরে বিএনপি সমর্থিত বহিরাগতরা একজন ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেলে দেন। এরপর থেকে সাধারণ ছাত্রদের ভেতর চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতে রামদা দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একজোট হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন। রেলিগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে প্রায় ৫০ আহত হন।

কুয়েট সিভিল ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেন। তারা সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করেন। আমরা ভিসির কাছে এই বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি। পরে আশপাশের এলাকার বিএনপির লোকজন সঙ্গে নিয়ে তারা আবার হামলা চালায়। এতে অসংখ্য ছাত্র আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের কর্মীরা ছাত্রদের রক্ত ঝরিয়েছে। তারা কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে ১০টা কোপ দিয়েছে,  জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলে পা ইট দিয়ে থেতলে দিয়েছে। অসংখ্য ছাত্র আহত। সব তথ্য পরে দিতে পারব।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি বলেন, ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, কুয়েটের সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলামকে রামদা দিয়ে কোপানো হয়েছে। জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও যুগ্ম সচিব রাসেল ভাইও আহত হয়েছেন।

এদিকে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৮টায় শিববাড়ির মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর ও খুলনা জেলা শাখা।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন