আমতলীতে প্রথম নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যান হলেন সোহেলী পারভীন মালা


স্বামীকে কেড়ে নিয়েছেন মহামারী করোনা ২০২০ সালের ৪ জুলাই ইউপি চেয়ারম্যান থাকাবস্থায়। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হার না মানা এক রাজনীতিবিদের স্ত্রীও তিনি । দুই কন্যার জননী আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন মালা, বাবা ছিলেন তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান, স্বামীও ছিলেন তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান।
নিজেও হয়েছেন আমতলী উপজেলায় এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি আমতলী উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত উপজেলার প্রথম কোনো নারী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন, কোথাও এর আগে দলীয় প্রতীকে কিংবা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান কিংবা অন্য জনপ্রতিনিধি পদে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি আমতলীর কোনো নারী।
সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে উপজেলায় প্রথমবারের মতো আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী সোহেলী পারভীন মালা। সোহেলী পারভীন মালা ছিলেন আমতলী উপজেলায় প্রথম নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী।
পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বরগুনা জেলার প্রথম কোনো নারী জনপ্রতিনিধি প্রার্থী। ইউপি নির্বাচনে পাঁচ পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বির সাথে লড়াই করে জিতেছেন সোহেলী পারভীন মালা। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ২০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সোহেলী পারভীন মালা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল কালাম আজাদ (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন তিন হাজার ৬৬২ ভোট।
মালা আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত এ কে এম নুরুল হক তালুকদারের স্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সোহেলী পারভীন মালার বাবা পটুয়াাখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টানা তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আব্দুল্লাহর মেয়ে।
দুই কন্যার জননী সোহেলী পারভীন মালার স্বামী মারা যাওয়ার পর পুরুষশূন্য হয়ে পরে তার পরিবার। এ কারণে পারিবারিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্থানীয় ভোটারদের অনুরোধে এ নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। এরপর পান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। স্থানীয়রা জানান, ভোটের মাঠে প্রথম হলেও স্বামী প্রয়াত নুরুল হক তালুকদার একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় প্রচারকাজে মালার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার নিজ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালান সোহেলী পালভীন মালা। ইউপি চেয়ারম্যান বাবার রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা, বিয়ের পর স্বামীর কারণে ইউনিয়নের রাজনীতিতে আগে থেকেই তিনি দক্ষ। তাই নির্বাচনে বিজয়ী হতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি তার। আর তাই বিজয়ী ও হয়েছেন অনেক ভোটের ব্যবধানে। বরগুনা জেলা আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গির কবির জানান, বরগুনায় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন কোথাও এর আগে দলীয় প্রতীকে কোনো নারী জনপ্রতিনিধি পদে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পাননি।
সোহেলী পারভীন মালা জেলার প্রথম নারী, যিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়ের মালা অর্জন করেছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত নারী ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে মালা রেকর্ডও গড়েছেন। সোহেলী পারভীন মালা বলেন, গত বছরের ৪ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার স্বামী মারা যান। তার মৃত্যুর পর আমার মনে হয়েছে, এলাকার লোকজন তাদের অভিভাবক হারিয়েছেন। পরে তাদের অনুরোধে আমি একপর্যায়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমায় মনোনয়ন দিয়ে সম্মানিত করেছেন।
তিনি বলেন, যেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন, ঠিক তেমনি আমার এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সম্মানিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। উপজেলায় প্রথম নারী চেয়ারম্যান আমি। এছাড়াও বরগুনা জেলায় প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নারীও আমি। তাই সাধারণ মানুষের প্রতি আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য অনেক বেশি। তাই আমি আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সঠিক ভাবে পালনের জন্য সবার কাছে দোয়া সহযোগিত চাই।
এইচকেআর
