দামের আগুনে পুড়ছে মসলার বাজার


আগামী ১৭ জনু সোমবার পবিত্র ঈদুল আযহা। এ তুলনায় আর বাকি এক দিন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তেল-মসলাসহ নিত্যপণ্য কিনতে তড়িঘড়ি শুরু করেছেন ক্রেতারা। এ সুযোগে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। সপ্তাহের ব্যবধানে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
তারা বলছেন, মাংস রান্নায় প্রচুর পরিমাণে আদা, রসুন ও পেয়াজের ব্যবহার হয়। তাই কোরবানি সামনে রেখে এসব পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার না করায় ব্যবসায়ীদের কোনো সাজা হয় না। এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। তার ওপর আদা, রসুন ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে খুচরা বাজারেও দাম বাড়াতে হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর বাংলাবাজার, রূপাতলী বাজার ও পোর্ট রোড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আদার। ২৪০ টাকার আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। ৭০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। ২২০ টাকার রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ২ সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি আদাতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০ টাকা। মাসের শুরুতে আদার কেজি ছিল ২৪০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। মাসের শুরুতে এ পণ্যের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এছাড়া ২২০ টাকা রসুন দাম ২৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরীর বাংলা বাজারের ব্যবসায়ী লিটন হোসেন বলেন, কোরবানির সময় বিভিন্ন মসলার পাশাপাশি আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বেশি চাহিদা থাকে। যার কারণে মাসের শুরু থেকে এসব পণ্যের দাম আস্তে-আস্তে বাড়তে থাকে। গড় হিসেবে করলে এই ৩টি পণ্যের প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন যেই দামে কিনতে পারি, তখন তার চেয়ে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করি। কারণ বাজার থেকে এসব পণ্য কেনার পর একটা অংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতি কেজিতে ৫ টাকা লাভ না করতে পারলে লোকসানে পড়তে হয়।
রূপাতলী বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, এখন প্রতি কেজি আদা বিক্রি করছি ২৮০ টাকায়, পেঁয়াজ ৯০ টাকা। এগুলোর দাম মাসের শুরুতে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কম ছিল। আমরা বেশি দামে পণ্য কিনেছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
এই বাজার করতে আসা সালাউদ্দিন আহমদে নামে এক ক্রেতা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদের সময় পণ্যের দাম কমে, আর আমাদের এখানে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া যে গত এক দুই বছর ধরে চলছে এমন নয়। গত এক যুগের বেশি সময় ধরেই এমনটা চলছে।
তিনি আরও বলেন, মাসের শুরুতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় কিনেছি। এখন সেটা কিনতে হয়েছে ৯০ টাকায়। আর দুই মাস আগে রসুন কিনেছি ১৯০ টাকায়। আর এখন ২৪০ টাকায়। শুধু এ গুলো নয়, হলুদ ও মরিচের গুঁড়োর দাম বেড়েছে। আর জিরা, ধনিয়া ও এলাচ তো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নগরীর চকবাজারের আনন্দ মসলার ঘরের মালিক কালাম হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি জিরা ৭০০ টাকা, ধনিয়া ৮০০ টাকা আর এলাচ ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারগুলোতে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমেছে। একই সঙ্গে উৎপাদন বাড়ায় গ্রীষ্মকালীন প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমেছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে ব্রয়লার ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারগুলোতে সোনালি মুরগি কেজিতে ৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, লেয়ার মুরগি ৩০ টাকা কমে ৩১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে এসব বাজারে সব ধরনের সবজি দাম কিছুটা কমেছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখী ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে শসার ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাধা কপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং গাজর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ টাকা, ধনে কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
লাল শাক ৩০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মাছ ১৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, চাষের পাঙাশ ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি আকার ভেদে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, দেশি কই ১০০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমএন
