আসন ভাগাভাগিতে নিয়ে বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি


বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) মাঝারি, ছোট, ইসলামপন্থী এবং অন্যান্য দলকে ভোটে টেনেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেউ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে রাজি নয়। সবাই আসন–সমঝোতা করে সংসদ সদস্য হতে চান। এমনকি বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী দল তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা চাইছে।
সর্বশেষ গতকাল বুধবার রাতে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আসন–সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকটি হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয়তায়। কোনো পক্ষই বৈঠকের স্থান ও আলোচনার বিষয়বস্তু খোলাসা করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈঠকটি হয়েছে গুলশানে একজন রাজনীতিকের বাসায়
বৈঠকে জাতীয় পার্টিকে আসনসহ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কী কী সুবিধা দিতে পারবে, তা আলোচনায় এসেছে।নৌকা প্রতীক–প্রত্যাশীদের তালিকায় ১৪ দলের শরিক ছাড়াও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) আছে। তবে তারা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীক চাইছে না। তাদের দলের কোনো কোনো নেতা নৌকা প্রতীক নেওয়ার পক্ষে। এ ছাড়া ইসলামপন্থী দল ও ‘কিংস পার্টি’খ্যাত নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলও রয়েছে নৌকা পাওয়ার দৌড়ে।
বৈঠক শেষ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈঠকে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। জাতীয় পার্টি আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই বৈঠকের বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।
অন্যদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাপার সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে। বৈঠকটি ছিল ফলপ্রসূ।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও জাপার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা দেখা করেছেন বলে জানা গেছে।
৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে কতটি আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন, সেই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
নৌকা প্রতীক–প্রত্যাশীদের তালিকায় ১৪ দলের শরিক ছাড়াও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও (জাপা) আছে। তবে তারা প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীক চাইছে না। তাদের দলের কোনো কোনো নেতা নৌকা প্রতীক নেওয়ার পক্ষে। এ ছাড়া ইসলামপন্থী দল ও ‘কিংস পার্টি’খ্যাত নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলও রয়েছে নৌকা পাওয়ার দৌড়ে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৯টি অংশ নিয়েছে। অবশ্য মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর দলের সংখ্যা কমতে পারে।সময় হলে বিরোধী দল দাঁড়িয়ে যাবে। তা ছাড়া এখানে আরও অনেক দল আছে। তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, সুপ্রিম পার্টিসহ বিভিন্ন দল রয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে অন্তত ২০টি দল সরাসরি নৌকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী। বাকি ছোট ও ইসলামপন্থী কিছু দল আলাদা নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন–সমঝোতা চায়। আর কিছু দল আওয়ামী লীগঘেঁষা হলেও নৌকা প্রতীক পাবে না বলে নিশ্চিত। তারা ন্যূনতম আওয়ামী লীগের মিত্রের স্বীকৃতি নিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি এবার বেশির ভাগ আসনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার মতো আর্থিক, সাংগঠনিক ও জনভিত্তি নেই বলে মনে করছেন অন্য অংশগ্রহণকারী দলের নেতারা। এ জন্যই সমঝোতার মাধ্যমে অন্তত শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসন নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কৌশল হচ্ছে প্রথমে প্রত্যাশিত আসনে সমঝোতা। এরপর আওয়ামী লীগের চাওয়া মেনে অংশগ্রহণ দেখাতে অন্যান্য আসনেও তাদের নামকাওয়াস্তে প্রার্থী থাকবে।
এমএন
