সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ :চরমোনাই পীর


বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঐতিহাসিক চরমোনাই ময়দানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক অগ্রহায়ণ মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পীর সাহেব চরমোনাই।
রেজাউল করীম বলেন, ‘২০১৪-১৮ সালে আমরা দেখেছি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এবারের নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। তাই আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না।
একই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে রেজাউল করীম বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’
চরমোনাই পীর তার বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর অসত্য বক্তব্যের প্রতিবাদও জানান। বলেন, ‘বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফিলিস্তিনের পক্ষের ভূমিকা জানেন না। অথচ আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে সব সময়ই সোচ্চার ছিলাম।’
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ উঠিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে রেজাউল করীম বলেন, ‘এই সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারাই আবার অন্যদের ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা নিয়ে সমালোচনা করছে। এটা খুবই হাস্যকর।’
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘দেশে এখন নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। অর্থনৈতিক সংকট আজ বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে। এই সংকট, অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ও অশান্তির জন্য দায়ী বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সীমাহীন ক্ষমতালিপ্সার কারণে দেশে আজ চরম সংকট। এরা দেশকে ভালোবাসে না। তাই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জগদ্দল পাথরের মত টিকে থাকতে চায়। এই অবৈধ সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে।’
পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফরের সমালোচনা করে গাজী আতাউর রহমানের প্রশ্ন, ‘দিল্লি কি বাংলাদেশের রাজধানী? সেখানে গিয়ে কেন অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে?’ তিনি বলেন, ‘দিল্লি ওবায়দুল কাদের সাহেবদের রাজধানী হতে পারে।’
ভারতবর্ষের কাছে হাসিনা সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর অনুরোধ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সমালোচনা করে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এদের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ কোনো স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়। বাংলাদেশের জনগণ আর এক মূহুর্তও এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সুতরাং আমাদের মুহতারাম আমীরের ঘোষিত দাবির আলোকে দ্রুততম সময়ে অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেশের চলমান সংকট আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করছি।’
একই সঙ্গে তিনি সারাদেশ থেকে আগত ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখন প্রথম কাজ হলো এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যেহেতু নির্বাচনমুখী দল, সেহেতু আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও রাখতে হবে। যদি নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তবে আমীরের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচনে ঝাপিয়ে পড়ে হাতপাখাকে বিজয়ী করতে হবে।’
ওলামা সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, জামিয়া ইসলামিয়া মদিনাতুল উলুম তিলপাপাড়া-ঢাকার মুহাতামীম মাওলানা ইউনুছ ঢালী প্রমুখ।
এমএন
