ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news
৯ উপজেলা, ৫ পৌরসভায় ১৪ বছর পর কমিটি

কমিটি দ্বন্দ্বে ফের আলোচনায় বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল

কমিটি দ্বন্দ্বে ফের আলোচনায় বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

দীর্ঘ ১৪ বছর পরে গঠন হচ্ছে বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১৪টি উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের কমিটি। প্রাথমিকভাবে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি হবে ওইসব ইউনিটে। আগামী ১৮-১৯ জুন কর্মি সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে এসব কমিটি চূড়ান্ত হবে বলে আশাবাদী তৃণমূল।

তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯টি উপজেলা ৫টি পৌরসভা ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে পুনরায় শুরু হয়েছে কানাঘুষা। পূর্বে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে গিয়ে যে অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে তার পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন অনেকে। আর এ নিয়েই জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল পুনরায় তৃধাবিভক্তি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।

তবে কমিটি নিয়ে আর কোন বাণিজ্য কিংবা অনিয়মের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ। এমনকি পূর্বে যে ঘটনা ঘটেছে তা ভুলে যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের অধিভুক্ত ১০টি উপজেলা এবং ৬টি পৌরসভা ইউনিটে সবশেষ ১৪ বছর পূর্বে কমিটি গঠন হয়। ওই কমিটির বেশিরভাগ নেতা জায়গা করে নিয়েছেন মূল দলে। কেউ মারা গেছেন আবার কেউ রাজনীতি ছেড়ে সংসার ধর্ম কিংবা ব্যবসায় মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু বিলুপ্ত হতে চলা উপজেলা এবং পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি ইতিপূর্বে।

তবে বছর তিনেক পূর্বে আমিনুল ইসলাম লিপনকে সভাপতি, রফিকুল ইসলাম জনিকে সাধারণ সম্পাদক ও জাবের আবদুল্লাহ্ সাদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আংশিক কমিটি গঠন পরবর্তী ইউনিট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন তারা। সে অনুযায়ী কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মাথায় বাকেরগঞ্জ উপজেলা এবং পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন জেলার নেতৃবৃন্দ।

এদিকে, কমিটি গঠন কার্যক্রমের শুরুতেই পদ বাণিজ্য, অনিয়মের অভিযোগ ওঠে জেলার নেতৃবৃন্দ’র বিরুদ্ধে। এর ফলে ইউনিট কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তাছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে গিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। বিশেষ করে অর্থের বিনিময়ে জাল জালিয়াতি এবং পদ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপনের বিরুদ্ধে। যার প্রমাণও পৌঁছে যায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। এ কারণে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির কার্যক্রম এক বছরের অধিক সময় স্থগিত রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর শুরু হয় দলের কেন্দ্রীয় বিভাগীয় টিমের বরিশাল সফর এবং কমিটি গঠন কার্যক্রম।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ‘ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় টিম জেলা বাদে বাকি পাঁচটি জেলার উপজেলাগুলোতে কর্মিসভা করেছে। সেখানকার কমিটিও চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু বরিশাল জেলার ১৮টি ইউনিটের কমিটি না করেই ফিরে যেতে হয়েছে কেন্দ্রীয় টিমকে। কথিত রয়েছে, কেন্দ্রীয় টিমের সফরকালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতির অসহযোগিতা এবং নিজেদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে কমিটি প্রশ্নের শেষ করতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে বিবাদমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে বিরোধের অবসান ঘটিয়ে পুনরায় বরিশাল জেলার ১৪টি ইউনিট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। আগামী ১৮-১৯ জুন কর্মি সম্মেলনের মাধ্যমে ওইসব ইউনিটে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন জেলা এবং কেন্দ্রীয় টিমের সদস্যরা। সেই কমিটি নিয়েই আবার বিভক্তি দেখা দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিবাদমান সভাপতি, সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে।

পদ প্রত্যাশী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে বিবাদমান তিন নেতার মধ্যে ফের গ্রুপিং শুরু হয়েছে। তারা যে যার মতো নিজেদের লোকের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। তাদের এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ত্যাগী, বঞ্চিত এবং মেধাবী নেতৃত্ব বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন পদ প্রত্যাশীরা।

তারা অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে যাদের নাম আলোচনার শীর্ষস্থানে রয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত নন। আবার অনেকে রয়েছেন যারা এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া যেসব নেতারা ইতিপূর্বে নেতৃত্বে থেকেও দলকে সুসংগঠিত করতে পারেননি তাদের নামও শোনা যাচ্ছে চূড়ান্ত তালিকায়।

নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করে বলেন, ‘মেহেন্দিগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক প্রার্থী হয়েছেন আল আমিন খান। যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি’র ঘনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে পরিচিত। আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রার্থী হিয়েছেন জুয়েল নামক একজন। তিনিও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আবার উজিরপুর উপজেলায় রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ইউসুব নামের জনৈক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে কমিটির তালিকায়। এছাড়া হিজলা উপজেলায় আব্দুল হামিদ নামের একজন আহ্বায়ক পদের দাবিদার হয়েছেন। ইতিপূর্বে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এবং দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ পদ প্রত্যাশীদের। মুলাদী উপজেলায় শোনা যাচ্ছে নজরুল ইসলাম হাওলাদার, রাসেদ খান এবং সোয়েব সিকদারের নাম। এদের মধ্যে সোয়েব সিকদার ইতিপূর্বে জাপা’র একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের। আবার রাসেদ খান বিএনপি’র রাজনীতিতে নতুন মুখ। তাছাড়া নজরুল ইসলাম হাওলাদার ১৪ বছরের পুরানো কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দলকে নতুন করে বিতর্কে ফেলতেই ত্যাগী এবং তৃণমূল নেতাদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা চলছে। যা নিয়ে কেন্দ্রীয় টিমের কাছে একাধিক নালিশও গেছে বলে দাবি পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতার।

কমিটি গঠন এবং অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছর পরে কমিটি হচ্ছে এটাই আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমরা চাচ্ছি একটি স্বচ্ছ কমিটি উপহার দিতে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছেন সেইসব নেতাদের আমরা সুযোগ করে দিতে চাচ্ছি নতুন কমিটিতে। তাছাড়া অনেকে ছাত্রদল করেও কমিটিতে পদ পদবী পাননি। সেসব নেতাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন প্রকার অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটা বিভাগীয় টিম এবং কেন্দ্রীয় কমিটি বিচার করবেন।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনি বলেন, ‘পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর হতে দেয়া যাবে না। আমরা চাই নতুন এবং পুরাতনদের সমন্বয়ে ইউনিট কমিটি গঠন করতে। যারা দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিএনপি’র রাজনীতির সাথে ‘অ্যাকটিভ’ ভাবে জড়িত রয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে তদবিরের কারণে সব কিছু স্বচ্ছভাবে করা সম্ভব হয় না। অনেক সিনিয়র নেতার তদবির রাখতে গিয়ে ভুল হতে পারে। তবে সেখানে অনিয়ম কিংবা বাণিজ্যের কিছু থাকবে না। তাছাড়া বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় টিম সরাসরি তদারকি করছেন। সুতরাং কেউ চাইলেও অনিয়ম করতে পারবে না।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম লিপনের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দিয়েছেন। তবে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় টিমের সদস্য আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির দিকে যাচ্ছি না। আপাতত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করছি। এই কমিটির মাধ্যমেই পরবর্তীতে সম্মেলন করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হবে।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি অনেক বড় একটা দল। এখানে নেতা-কর্মীও অনেক বেশি। কিন্তু সবাইকেই তো পদ দেয়া সম্ভব নয়। যারা পদ পাবেন না তারা অভিযোগ তুলতেই পারেন। তাছাড়া বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি নিজেই এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, ‘তাদের বলাটা স্বাভাবিক। কেননা ইতিপূর্বে নেতার বাড়িতে, নেতার অফিসে বসে পকেট কমিটি হয়েছে। সেই ধারণাটা এখনো কর্মীদের মধ্যে রয়ে গেছে। তবে পূর্বে কি হয়েছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল পুনর্গঠন নিয়ে কি করা হয়েছে সেটা নিয়েও আমি কিছু বলতে চাই না। বর্তমানে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে কথা হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলে প্রকৃত স্বেচ্ছাসেবকরাই জায়গা পাবেন। এ নিয়ে কোন বিতর্কের সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন