ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news
রানা প্লাজা ধস

সোহেল রানার হাইকোর্টের জামিন চেম্বারে স্থগিত

সোহেল রানার হাইকোর্টের জামিন চেম্বারে স্থগিত
রানা প্লাজার ভবন মালিক সোহেল রানা/ ফাইল ছবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

আগামী ৮ মে পর্যন্ত আসামির জামিন স্থগিত করা হয়েছে। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে জামিন স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন চেম্বারে স্থগিত হওয়ায় আপাতত সোহেল রানার কারামুক্তি মিলছে না।

রোববার (৯ এপ্রিল) সোহেল রানার জামিন স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোরশেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিসটার সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ সাইফুল আলম। আর সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম।

এর আগে সকালে এ হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট সুফিয়া খাতুন এ আপিল আবেদন করেন।

গত ৬ এপ্রিল রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় করা মামলায় সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে তখন জানিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা।

সোহেল রানার জামিন বিষয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে ওইদিন হাইকোর্টের বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরুউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।


আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুনমুন আক্তার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান।

ওইদিন আইনজীবী কামরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, হত্যা মামলায় সোহেল রানাকে নিয়মিত জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। এখন রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে এ জামিন আদেশে স্থগিতাদেশ না নিলে তার মুক্তিতে বাধা নেই।

তবে একই দিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান জানিয়েছিলেন, হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে যাবে।


মামলাটি কী পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে। এ মামলায় পাঁচ শতাধিক সাক্ষী। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।


২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাকশ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশের ওই ঘটনা সেসময় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। দেশে কারখানার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলে সরকার ও মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে।

তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯, ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলার আসামিরা হলেন- রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলাটি এখন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলায় নিম্ন আদালতে সোহেল রানার জামিন আবেদন খারিজ হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৬ এপ্রিল আসামি সোহেলকে জামিন দিয়ে রায় দেন উচ্চ আদালত।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন