কলাপাড়ায় অকেজো অর্ধশত স্লুইসগেট


বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার অবস্থান। এখানে ধান ও সবজির ওপর সরাসরি নির্ভরশীল প্রায় ৩৫ হাজার কৃষক। তবে উপজেলার অর্ধশতাধিক স্লুইসগেট অকেজো হয়ে থাকায় নোনা পানি ফসলে ঢুকে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে।
জানা গেছে, গত কয়েক দশক থেকে উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় অর্ধশত স্লুইসগেট অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর ফলে প্রতিবছরই আউশ, আমন বা শাকসবজি চাষে দুর্ভোগে পড়তে হয় কৃষকদের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নির্মিত এসব স্লুইসগেট কবে নাগাদ মেরামত করা হবে তা এখনো বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্ধশতাধিক স্লুইসগেট অকেজো পাওয়া যায়। তবে পাউবোর তথ্যানুসারে, কলাপাড়ায় ৪৭টি ফ্লাসিং (এফএস), ৫৮টি ড্রেনেজ (ডিএস) এবং ২৫টি রেগুলেটরসহ ১৩০টি স্লুইচগেট রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টিতে সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে ১২টি আংশিক খারাপ, আর ২৩টি সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে আছে।
এসব স্লুইসগেট একটি প্রভাবশালী মহল মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকের সর্বনাশ করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের জন্য স্লুইসগেট মেরামতের বিকল্প কিছুই নেই। কারণ, যখন পানি প্রয়োজন তখন যদি না পাই আর যখন মিষ্টি পানির প্রয়োজন তখন যদি লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে তাহলে তা সর্বনাশ ডেকে আনে।
আরও জানা গেছে, উপজেলার পক্ষিয়াপাড়া, মেলাপাড়া, পূর্ব-মধুখালী, চরপাড়া, সাফাখালী, লোন্দা, হাফেজ প্যাদা, পাটুয়া, দেবপুর, দশকানি, আনিপাড়া, গাজীর খাল, টিয়াখালী, ইটবাড়িয়া, সদরপুর, গৈয়াতলা, ডালবুগঞ্জসহ শতকরা ৫০ ভাগ স্লুইসগেট কৃষকের কোনো কাজে আসে না। নীলগঞ্জের স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের অর্থায়নে নোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে স্লুইসগেটের রিভার সাইটের সংযোগ খালে বাঁধ দেন। এরপরে ভেতরে খালের মিঠা পানি ব্যবহার করে ১২ মাস সবজি আবাদ করেন।
স্লুইসগেটের এই সমস্যার কারণে কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কৃষি অফিসও। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার কৃষকের জন্য বড় ভূমিকা রাখে এই স্লুইসগেটগুলো। কিন্তু গত কয়েক দশক থেকে অনেক স্লুইসগেট অকেজো থাকায় বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেও কোনো সমাধান হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকদের বাঁচানোর স্বার্থেই স্লুইসগেটগুলো মেরামত হওয়া জরুরি।
কলাপাড়া উপজেলা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতি আর প্রভাবশালীদের বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা। কৃষকদের বাঁচাতে অবশ্যই স্লুইসগেটগুলো মেরামত ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করি।
পাউবোর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, যে অকেজো স্লুইসগেটগুলো রয়েছে তার মেরামত কতদিনে করা যায় তা বলা যাচ্ছে না। কারণ অনেক আগে পাঠানো প্রস্তাব এখনো পাস হয়নি। তবে তালিকা করে পুনর্নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পেলে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।
এএজে
