ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Motobad news

বাউফলে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ

বাউফলে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঢাকায় বসে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা বিএনরি যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তসলিম তালুকদার ও মো. অনিচুর রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে আগামীকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) পূর্ব ঘোষিত উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরিশাল বিভাগের বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিভাগের বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর মহোদয় তাকে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে বাউফল উপজেলা বিএনপির আগামীকাল শনিবারের  সম্মেলন স্থগিত করে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আগামী সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় পটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামীকাল শনিবার উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে সামনে রেখে উপজেলা সদরে বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ প্রস্তুত করা হয়। তোরণের কাজ চলছিল। শেষ মুহুর্তে এসে বৃহস্পতিবার বরিশাল বিভাগের বিএনপি দলীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে ওই সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তসলিম তালুকদার অভিযোগ করেছেন, দুর্দিনে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ, অসাংগঠনিক ও এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের নির্দেশে ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. অনিচুর রহমান বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বার ও সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ ওরফে আপেল ফিরোজ দুজনেই বিতর্কিত। আবদুল জব্বার ঢাকায় থাকেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার প্রমাণ আছে। আর আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে অদক্ষ নেতা-কর্মীদের নেতা বানানোর আশ্বাস দিয়ে টাকা নেওয়ার অডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের অজ্ঞাবহ হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নওমালা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি পশ্চিম নওমালা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. ইউসুফ আলী বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা ছিলাম। সব আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক পদ পাইনি। আমার পদে রাখা হয়েছে আওয়ামী লীগের অর্থ জোগানদাতা এক ব্যক্তিকে। প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে সক্রিয় জামায়াতের এক রুকনকে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক ও নাজিরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বগা ইয়াকুব শরীফ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নাম পাঠিয়েছিলাম। তাঁদের কারো নামই রাখা হয়নি। তিনি আরও বলেন, রায়হান জব্বার থাকেন ঢাকায়। তাকে করা হয়েছে কালিশুরী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মো. ফারুক গাজী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাকে করা হয়েছে বাউফল উপজেলা সদর ইউনিয়নের সভাপতি। নজরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাকে করা হয়েছে ধূলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বারের আপন ছোট ভাই। মনিরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। তাকে করা হয়েছে সূর্য্যমনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। মো. রুহুর আমিনকে কারা হয়েছে মদনপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। অধিকাংশ ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেন বলেন,‘তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিীহীন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়েই নিয়েই ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করেছে। এখানে তাঁর কোনো হাত নাই।’

এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল জব্বারের মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন ধরে অসংখ্যবার ফোন করলে তিনি ধরেননি। সদস্য সচিব আপেল মাহমুদ মুঠোফোনে বলেন, দলে যারা জায়গা পায়নি, তাঁরাই অভিযোগ করেছেন। কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়ার পর ফেসবুকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, ঢাকায় বসে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,অনেকে ঢাকায় ব্যবসা করলেও এলাকায় আসেন। এর আগেও তাঁরা কমিটিতে ছিলেন।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায় , ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর বাউফল উপজেলা ও বাউফল পৌরসভা শাখা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রশিদ মিয়া ও সদস্যসচিব স্নেহাংশু সরকার স্বাক্ষরিত ওই কমিটিতে মো. শাহজাদা মিয়াকে আহ্বায়ক এবং মো. অলিয়ার রহমানকে সদস্যসচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এবং মো. হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক ও মো. মিজানুর রহমানকে সদস্যসচিব করে বাউফল পৌরসভা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আগের কমিটি বহাল রেখেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে বিএনপির কমিটি পাসের আশ্বাসের অডিও ফাঁসের ঘটনায় চলতি বছরের ২৭ জুন নৈতিক স্খলন ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাউফল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. শাহজাদা মিয়া ও সদস্যসচিব মো. অলিয়ার রহমানকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নতুন করে আবদুল জব্বারকে আহ্বায়ক ও আপেল মাহমুদকে সদস্যসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দুজন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।


এ সংক্রান্ত ৯ জুন গনমাধ্যমে ‘৫০ হাজার টাকায় বিএনপির কমিটি পাসের আশ্বাস , অডিও ফাঁস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন