কলাপাড়ায় টাকার বিনিমিয়ে হত্যা মামলার আসামিকে অব্যাহতির অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাঞ্চল্যকর নববধূ চম্পা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই)।
সেখানে টাকার বিনিময়ে প্রধান আসামি বাবুল হাওলাদারকে অব্যাহতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল মতিন খানের বিরুদ্ধে।
রোববার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী চাঁন মিয়া। তিনি অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্তের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিন তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। দাবীকৃত টাকার মধ্যে দেড় লাক টাকাও দেন তিনি। বাকি টাকা না দিতে পারায় তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রধান আসামি বাবুল হাওলাদারকে অভিযোগপত্রে রেখে এজাহার নামীয় ও ঘাতক বাবুলের স্বীকারোক্তি দেয়া আসামিদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
তিনি গত ৬ নভেম্বর এ অভিযোগপত্র বাতিল চেয়ে পুনঃতদন্তের জন্য কলাপাড়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজির আবেদন করেছেন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি তালতলী উপজেলার কলারং গ্রামের চাঁন মিয়া সিকদারের মেয়ে চম্পার পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চাকামুইয়া ইউনিয়নের গামরীবুনিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদারের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের ১২ দিনের (১২ জানুয়ারি) মাথায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে যান স্বামী বাবুল হাওলাদার ও অন্য আসামিরা। এরপর থেকে নববধূ চম্পা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় চম্পার বাবা চাঁন মিয়া ১৪ জানুয়ারি তালতলী থানায় জামাতা বাবুলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেন।
নিখোঁজের ১০ দিন পর ২২ জানুয়ারি বাবুল হাওলাদারের বাড়ির কাছে মাঠে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় চম্পার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার চম্পার বাবা চাঁন মিয়া ওই দিন কলাপাড়া থানায় বাবুল হাওলাদারকে প্রধান আসামি করে ১১ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার দেড় মাস পর ২০২০ সালের ৭ মার্চ পুলিশ প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করে। বাবুল হাওলাদার থানায় ও আদালতে তার সহযোগীদের নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দেন।
আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পটুয়াখালী পিবিআইতে ন্যাস্ত করেন। চান মিয়ার অভিযোগ, পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন প্রধান আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেয়ার পরও আসামি এবং এজাহার নামীয় আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে শুধু প্রধান আসামি বাবুলের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান আসামি বাবুল হাওলাদার নিজের পরিকল্পনায় স্ত্রী চম্পাকে হত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁন মিয়া অভিযোগ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন শুরুতেই আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে আসছেন। এক পর্যায় তাঁর কাছে ঘুষ দাবি করেন। চাহিদামতো টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সকলকে অব্যাহতি দিয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে তার ও স্বাক্ষীদের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এই অভিযোগপত্রে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন না বলেও জানান। ন্যায়বিচার পেতে তিনি অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্তের দাবি জানান।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন খান টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তদন্তানুসারে শুধু প্রধান আসামি বাবুলের বিরুদ্ধেই চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাদী আদালতে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে পারেন।
পিবিআই’র পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে নিয়ম অনুসারে অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
