৩০ বছর আগের বিশ্বকাপের সাথে এবারের আসরের এত মিল!


অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ হিসাব-নিকাশ চলছে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল। আর পাকিস্তান ফাইনালে পৌঁছেছে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে।
১৯৯২ সালে একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দেশ। এই দুই বিশ্ব মহারণের মধ্যে ক্রিকেটপ্রেমীরা খুঁজে পেলেন সাত সাতটি মিল। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যে অমিলও অনেক। এবার পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমের বয়স সে বারের অধিনায়ক ইমরান খানের মতো ৩৯ বছর নয়। ইমরান নিজের কেরিয়ারের শেষে এসে চেয়েছিলেন একটা বিশ্বকাপ। আর ২৮ বছরের ঝকঝকে ওপেনার বাবর সমালোচিত হয়ে আসছেন তার অধিনায়কত্বের জন্য। জয় পেলে এটা হবে সমালোচকদের উদ্দেশে তার যোগ্য উত্তর।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড। মেলবোর্নে ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও মুখোমুখি হতে চলেছে এই দুই দেশই।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক সেই অস্ট্রেলিয়াই। শুধু তাই নয়, সে বার মেলবোর্নের মাঠে হয়েছিল ফাইনাল ম্যাচ। এবারো তাই হতে চলেছে।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করেছিল পাকিস্তান। ঘুরেফিরে এবারের বিশ্বকাপেও হলো তাই। এবার বাবর আজমের পাকিস্তান ব্ল্যাক ক্যাপদের ৭ উইকেটে হারানোর পর বিশ্বকাপ জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপেও ঢিমেতালে শুরু হয়েছিল পাকিস্তান-আক্রমণ। প্রথম দিকে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল টিম ইমরানকে। এবার সুপার ১২ পর্যন্ত মাত্র ৬ পয়েন্ট পেয়েছিল বাবরের পাকিস্তান। প্রথমে ভারত ও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে পরে পর পর তিন ম্যাচে জিতে ফাইনালে খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান দল।
ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করাচ্ছেন সেবার ও এবারের অস্ট্রেলিয়া টিমের কথা। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে থেকেও সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। অন্যদিকে, কম পয়েন্ট পেয়েও সেমিতে খেলার সুযোগ পায় পাকিস্তান। এবারো হলো তাই।
১৯৯২ সালে পাকিস্তান ৯ পয়েন্ট পেয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল। বস্তুত, তারাই একমাত্র দল ছিল যারা ১০ পয়েন্টের কম পেয়েও ফাইনালে খেলার সুযোগ করে নিয়েছিল।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ও ২০২২-এর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আরো মিল আছে। ১৯৯২ সালে ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’ ছিল অস্ট্রেলিয়া। আর আয়োজকও ছিল তারা। এবারো হলো তাই। ১৯৮৭ সালে ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ছিল অস্ট্রেলিয়া।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক অস্ট্রেলিয়াও সেমিফাইনালে যেতে পারেনি। এবারো ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’ হয়েই থেকে গেল তারা।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ফাইনালে খেলার আগে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে হেরেছিল জিম্বাবুয়ের কাছে। তখন জিম্বাবুয়ে ছিল আইসিসি’র সহযোগী সদস্য। সে বছর ওই একটি ম্যাচেই জয় পেয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ঘটল একই রকম ঘটনা। এবার সুপার ১২-এ ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। এটিই তাদের একমাত্র জেতা ম্যাচ।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে মাত্র দুটি ম্যাচে জয়লাভ করেছিল ভারত। তার মধ্যে একটি জয় ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচে জিতে ভারত দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এবং এবারো পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত।
মজার মিল আরো আছে। ১৯৯২ সালের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন শচিন টেন্ডুলকার। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চেনা ফর্মে দেখা গেছে বিরাট কোহলিকে। শচিন ও বিরাটের প্রায়শই তুলনা করে থাকেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। আর এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে অসাধারণ অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন সেই বিরাটই।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ছিটকে যাওয়ার বড় কারণ ছিল ইংল্যান্ড। সেবার অস্ট্রেলিয়াকে ৩৭ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারো প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
ইংল্যান্ড ১৯৯২ সালে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছিল। এবারো সেমিফাইনালের আগে পর্যন্ত তাই হয়েছে। আরো টুকরোটাকরা মিল থাকলেও থাকতে পারে দু’বারের বিশ্বকাপের মধ্যে।
১৯৯২ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে মেলবোর্নে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এখন দেখার, সে বারের ইমরান খান এ বারের বাবর আজম হন কি না।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
এইচকেআর
