ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Motobad news

নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন পরও বরাদ্দের চাল পাননি বেতাগীর জেলেরা

নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন পরও বরাদ্দের চাল পাননি বেতাগীর জেলেরা
অবরোধের কারণে পরে আছে জেলেদের নৌকা ও ট্রলার।
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

উপকূলীয় বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে মো. ফারুক শরিফ। গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন পার হলেও এখনো সরকারের বরাদ্দকৃত কোনো চাল পাননি এ জেলে। ফলে পরিবার নিয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপনের কথা জানান এই জেলে।

একই ইউনিয়নের ছোট মোকামিয়া গ্রামের আরেক জেলে মো. ফিরোজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গতবারের নিষেধাজ্ঞার চালই এখনো পাই নাই। এবারের চাল কবে পামু জানি না। মোরা ধার-দেনায় জর্জরিত। মাছ ধরতে না পারলে দেনা পরিশোধ করমু কি দিয়া? ঘরে সয়সদয় যা আছেলে হ্যা (তা) শেষ! এহন খামু কি! দুই হপ্তা গেলেও সরকারেরডে গোনে মোরা কিছু পাই নাই।’


গতক‍াল বুধবার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এমনি অভিযোগ শোনা যায় জেলেদের মুখে। সবার একটাই অভিযোগ নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন শেষেও এখনো কেন তাদের ঘরে চাল পৌঁছায়নি! ফলে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামছে। একদিকে প্রশাসনের অভিযান চলছে, অন্যদিকে জেলেরা ক্ষুধার তাড়নায় নদীতে জাল ফেলছে।

এ কারণে গত ১৩ দিনে পেটের দায়ে মৎস্য আহরণে নদীতে নেমে এ উপজেলার বহু জেলে কারাদণ্ডের স্বীকার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক জাল এবং ইলিশ মাছ জব্দও করা হয়। অন্য কোনো পেশায় সুযোগ না থাকায় অবরোধের এই সময়টায় বাধ্য হয়ে অনেক জেলে বেকার বসে আছেন। কেউ কেউ নৌকা, ট্রলার এবং জাল মেরামত করছেন।

বেতাগী উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, উপকূলীয় বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায় নিবন্ধিত ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছেন ৩ হাজার ১০০ জন। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যেন নদী থেকে ইলিশ শিকারে না যান তার জন্য প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে ৩ হাজার ১০০ জন জেলের ৭৭ দশমিক ৫ মেট্রিক টন খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। এরই মধ্যে জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে বেতাগী উপজেলার ৩ হাজার ১০০ জন জেলের জন্য ৭৭ দশমিক ৫ মেট্রিক টন বরাদ্দের চাল এসেছে। তবে নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিন পার হলেও এখনো উপজেলার জেলেদের মাঝে সেই চাল বিতরণ শুরু করতে পারেনি মৎস্য অধিদপ্তর। 

জেলেদের চাল দেওয়ার বিষয়ে উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী জালাল আহমেদ বলেন, ‘জেলেদের জন্য বরাদ্দের চালের চিঠি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য চাল বিতরণ শুরু করতে পারিনি। আমরা জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করেছি। আশা করি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই চাল বিতরণ শুরু করতে পারব।’ 

বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফফার বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানদের নামে চালের ডিও দেওয়া হয়েছে। আমি তাঁদের চাল দেওয়ার জন্য বারবার বলতেছি। তাঁরা চাল বিতরণ কবে শুরু করবে আমাকে এখনো জানায়নি।’ 

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘অবরোধের এই সময়ে জেলেরা যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে যেন না খেয়ে থাকে, সে জন্য প্রতি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে আমরা এই চাল বিতরণ শুরু করব।’ 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন