বোলার সাকিবকে নিয়ে চিন্তা


সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। টাইগারদের দলে তার উপস্থিতি তাই বাড়তি স্বস্তি দেয়। একজন বাড়তি ব্যাটার ও বোলারের দায়িত্ব পালন করেন একাদশে। তাই সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ভরসার নাম। তার ব্যাটিং নিয়ে অতীতে আলোচনা হলেও বোলিং নিয়ে কখনই সেভাবে প্রশ্ন ওঠেনি। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে তার ধারহীন টাইগার দুর্গে বাড়িয়েছে দুশ্চিন্তা। ম্যাচ শেষে নিজেই স্বীকার করেছেন তিনিও অনুভব করেন এদিকে নজর বাড়ানোর।
ঘটনাটা ত্রিদেশীয় সিরিজে টাইগারদের শেষ ম্যাচের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তখনও রিজওয়ানদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৬ বলে ৬২ রান। দুই চার ও এক ছক্কাসহ মোহাম্মদ নওয়াজরা এ ওভার থেকে সংগ্রহ করেন ১৭ রান। তাতে ব্যবধান কমে আসে প্রতিপক্ষদের। শেষ পর্যন্ত এক বল হাতে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাবর আজমের দল। সেই ওভারটাই যেন ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বানিয়ে দিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সিরিজে কোনো উইকেট না পাওয়ায় বিশ্বকাপের আগে দলে বাড়ছে দুশ্চিন্তা।
রাত পোহালেই শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে এবার সরাসরি মূল পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। আগামী ২৪ অক্টোবর এ গ্রুপের রানার-আপ দলের বিপক্ষে খেলতে নামবে টাইগাররা। তবে তার আগে ভাবিয়ে তুলেছে সাকিব আল হাসানের ধারহীন বোলিং।
বিশ্বের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগগুলো দাপিয়ে বেড়ান সাকিব। বিশেষ করে গত মৌসুম বাদ দিলে বেশ কয়েক বছর ধরে আইপিলে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ। তবে সেখানে তাকে বোলারের ভূমিকাতেই দেখা যেত। এ কারণে তাকে অনুশীলনে ব্যাট হাতেই ঘাম ঝড়াতে দেখা যেত। আজকাল তাই নেটে বল হাতে দীর্ঘ সময় সাকিবকে দেখতে পাওয়ার ঘটনা খুব বিরল। প্রস্তুতির জন্য তিনি ব্যাটিংয়ের দিকেই মনোযোগ দেন।
এই ব্যাটিংয়ের মনোযোগের ফল পেয়েছেন নিউজিল্যান্ডে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সংস্করণের ত্রিদেশীয় সিরিজে। পরপর দুটি অর্ধশতকসহ তিন ম্যাচে করেছেন ১৫৪ রান। তার গড় এবং স্ট্রাইক রেটও চোখে পড়ার মতো। গড় ৫১.৩৩ ও স্ট্রাইক রেট ১৫০.৯৮। তবে বল হাতে এই সাকিব যেন একেবারেই অচেনা। তিন ম্যাচে দশ ওভার বল করে দিয়েছেন ৯১ রান। ঝুলিতে নেই কোনো উইকেট। সিরিজের দুটি ম্যাচে তো তিনি নিজের চার ওভারের কোটাও পূরণ করেননি।
ম্যাচ শেষে আলোচনায় সাকিব নিজেই বোলিংয়ে মনোযোগের কথা উল্লেখ করেছেন, ‘আমি মনে করি, দলের জন্য রান করাই আমার কাজ। তবে টিম বোলিংয়েও আমার অবদান আশা করে। ত্রিদেশীয় সিরিজে তিন ম্যাচে আমার বোলিং ভালো হয়নি। এদিকে আমাকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।’
সাকিব কদাচিৎ বাঁহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে আক্রমণে আসতে পছন্দ করেন। এমন একটা মিথ প্রচলন ছিল ২০১৭ সালের বিপিএলের ফাইনালের আগ পর্যন্ত। সেবার ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল রংপুর রাইডার্স। রংপুরের হয়ে ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন ক্রিস গেইল। অথচ বাঁ-হাতি ব্যাটার থাকা সত্ত্বেও ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব বল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই থেকেই কি সাকিব বাঁ-হাতিদের বিধ্বংসী তান্ডব সামলাতে ভয় পান! এই সিরিজে উইকেট শূন্য সাকিবের ধারহীন বোলিং দেখা গেছে, ধরা পড়েছে বাঁহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে তার দুর্বলতাও।
২০২১ সাল থেকে সাকিব এখন পর্যন্ত ২৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। এরমধ্যে বাঁহাতি ব্যাটারদের উইকেট নিয়েছেন ৭ বার। অন্যদিকে ডানহাতিদের আউট করেছেন ২৭ বার। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, বাহাতি ব্যাটারদের বেলায় বোলার সাকিবের বলে ধার হারিয়ে গেল কি না!
তবে সাকিবের শৈশবের ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম এই প্রশ্নের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন, ‘একটা সময় ছিল যখন সাকিব বাঁহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে বল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। পরে সে একটা উপায় খুঁজে পেয়েছিল। তবে সেই উপায়ও কাজে আসে যখন উইকেট থাকে স্পিয়ন সহায়ক, তখন বাঁহাতি ব্যাটারদের নাস্তানাবুদ করতে পারতে সাকিব। কিন্তু উইকেট যখন স্পিন সহায়ক না, সেখানেই সাকিব বাঁহাতি ব্যাটারদের ঘায়েল করতে পারে না।’
নাজমুলের তত্বাবধানে থাকার সময় সাকিবের বোলিং গতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। অতীতে সাকিব প্রতি ঘণ্টায় ৮০-৯৯ কিমি করতেন। এমনকি ১০৫ কিলোমিটার গতিতে পর্যন্ত বল করতে পারতেন। তবে সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা গেছে তিনি প্রতি ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে বল করেন।
ফাহিম মনে করেন, ‘সাকিব আক্রমণাত্মক স্পিন করতে পারে না। তাই তাকে রক্ষণাত্মক বল করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এটিই তার এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হতে পারে। কারণ সেখানে স্পিন সহায়ক কোনো উইকেট থাকবে না।’
এএজে
