ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news

কলাপাড়ায় ১০১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ শিক্ষকের পদ শূন্য

কলাপাড়ায় ১০১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ শিক্ষকের পদ শূন্য
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা দীর্ঘ দিনের। বছরের পর বছর সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকরা।

শিক্ষক সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে বিরক্ত। বারবার উপজেলা শিক্ষা অফিসে ধরণা দিলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলায় ১৭৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৯ হাজার ৯৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬০ জন সহকারী শিক্ষক ও একজন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। শিক্ষক স্বল্পতায় মানসম্মত ফলাফলের দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের এমন ফলাফল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী দিনে উপজেলায় ভালো ফলাফল আসবে না। ওই বিদ্যালয়গুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের  প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটে পড়ে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম চলছে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলায় কিছু মহিলা শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকায় চলমান সংকট আরও প্রট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত স্থান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক স্বল্পতায় হোঁচট খেতে হচ্ছে।

শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দুটি ক্লাসে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। তাই শিক্ষকরা এক দিকে অতিরিক্ত কাজ আর পাঠদান কার্যক্রমে ক্লান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এক বা দুটি বিষয় সারাদিন পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বিদ্যালয় ক্ষুধে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওইসব বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ও আশানুরূপ হচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয় তারাও আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় হতাশায় বাড়ছে।

খাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক মো. ইব্রাহীম বলেন, আমার বিদ্যালয় শিক্ষকের ৮টি পদের ৪টি পদ শূন্য। চার জন শিক্ষক রয়েছে। আমার বিদ্যালয় ৪০০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া আমাদের চারজন শিক্ষকের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছি। ২০১২ সালে খাজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত পাইলট বিদ্যালয় ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অত্যুতানন্দ্র দাস বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি অবগত আছি। সহকারী শিক্ষক নেই সেগুলোতে শিগগিরই শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়া হবে। সামনে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলে আমরা শত ভাগ সহকারী শিক্ষক পাব। আর প্রধান শিক্ষক নিয়ে যে মামলা চলমান। তারা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক দাবি করছে। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদ মর্যাদা দেওয়া যাবে না।
 


মো. এনামুল হক/এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন