জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেল হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত


দীর্ঘ ৮ বছর পরে গত রবিবার (২৪ জুলাই) রাতে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই পুরো জেলা জুড়ে চলতেছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। এছাড়াও হত্যা মামলার আসামীকে পদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
জেলা ছাত্রলীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পদ না দিয়ে নতুনদের কমিটিতে যায়গা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে জেলার বাইরের উপজেলার বাসিন্দারা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। এবং যারা পদ পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে কখনও ছাত্রলীগের কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহন না করেও তারা আজ জেলা কমিটিতে পদ পেয়েছে বলে জানা যায় । এতে ক্ষুব্ধ বঞ্চিত জেলা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। সদ্য গঠিত বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৩ সালে বরগুনার পাশ্ববর্তী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্র ক্লিন্টন হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামী আবদুল্লাহ আল মারজান। সদ্য ঘোষিত ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন যিনি। এছাড়াও বিগত ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে ইয়াবা সহ পুলিশের কাছে গ্রেফতার হয় এই মারজান। একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ও চিহ্নিত মাদক কারবারি কিভাবে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেল, এমন প্রশ্ন জেলা ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত সবার মুখে।
বরগুনা ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা-কর্মীরা জানান- যারা যেকোন ধরনের আন্দোলন সংগ্রামে রাস্তায় নেমেছেন, বছরের পর বছর দলের হয়ে কাজ করেছেন এমন অনেকেই পদ পায়নি এই সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটিতে। অথচ যারা কখনও ছাত্রলীগ করেনি, যাদেরকে কেউ কখনও মিছিল মিটিং এ দেখেনি এমন বহু লোক পদ পেয়েছে এই কমিটিতে। এমনকি চিহ্নিত মাদক কারবারি ও তুমুল আলোচিত মঠবাড়িয়ার ক্লিন্টন হত্যাকাণ্ডের মুল হোতা মারজান পেয়েছে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এটা জেলা ছাত্রলীগের জন্য কলঙ্ক ও লজ্জাজনক। এমন হলে ভবিষ্যতে প্রজন্ম ত্যাগী নেতা হওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে বলেও জানান তারা।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত মো. রুবেল বলেন, ত্যাগী, রাজপথে থাকা নেতাকর্মীদের কমিটিতে যায়গা হয়নি। অথচ হত্যা মামলার আসামী, কখনও দলীয় কার্যক্রমে অংশ না নেয়া, বাইরে থেকে আসা এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন। কমিটির আগে সকলের কাছ থেকে যে জীবন বৃত্তান্ত নেওয়া হয়েছিল তা বিবেচনা করেনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন বলেন, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মারজানকে ইউনিয়ন কমিটিতে নেয়ার বিষয়ে আগেই কেন্দ্রীয় কমিটির বাড়ন ছিল। তিনি কিভাবে জেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেল তাা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। হত্যা, ডাকাতি, চিহ্নিত মাদক মামলার আসামী পদ পেল জেলা কমিটিতে দেখে আমি বিব্রত বোধ করছি। এটা সত্যিই বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের জন্য লজ্জাজনক।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুর রশীদ রাফি বলেন, জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র সভাপতি ও সম্পাদকের হাতে। আমি শুধু সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করে তথ্য দিয়েছি। তবে আমার দেয়া তালিকায় মারজানের নাম ছিলনা। এই নামটি কেন্দ্র থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আবদুল্লাহ আল মারজানের বিষয়ে আমি বিস্তারিত কিছুই জানিনা। তবে এমন কেউ কমিটিতে থাকলে তাকে বাদ দেয়া উচিত বলে মনে করি। তা না হলে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ কলঙ্কিত হবে বলে আমি মনে করি। মারজান বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে জুবায়ের আদনান অনিককে সভাপতি ও তানভীর হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র।
এএজে
