সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে : মির্জা ফখরুল


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে যাদেরকে গুম করা হয়েছে, তাদেরকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের পরিবার তাদের সমস্ত ব্যাংকের লেনদেন, সম্পত্তির মালিকানা, ওয়ারিশ সার্টিফিকেট পর্যন্ত পাচ্ছে না।গুম হওয়ার পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে আছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে আমি বলছিলাম এই সরকারকে একমাত্র আখ্যা দেওয়া যেতে পারে গণশত্রু। তারা জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে।’
আজ শুক্রবার খিলগাঁওয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ‘গুম হওয়া’ কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
২০১০ সালের ২৪ জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার চৌধুরী আলমকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার নিখোঁজ হওয়ার এই দিনটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সাড়ে ১০টায় খিলগাঁওয়ে চৌধুরী আলমের বাসায় যান। তিনি চৌধুরী আলমের সহধর্মিনী হাসিনা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এ সময়ে চৌধুরীর আলমের দুই ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী, আবু সাদাত চৌধুরী, দুই মেয়ে মাহমুদা আখতার, মাহফুজা আখতার ও চৌধুরী আলমের ছোট ভাই খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘চৌধুরী আলমকে এই সরকারের নির্যাতনকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে ১২ বছরে শত চেষ্টা করেও তার পরিবার ও বিএনপি কোথাও কোনো সন্ধান পাইনি। এখন পর্যন্ত সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই ধরনের ঘটনা অনেকগুলো সংগঠিত হয়েছে।আমাদের হিসেবে আমাদের দলের লোকই আছে ছয় শ’র ওপরে।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত যে ধারা আছে সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে এই ধরনের জোর করে কাউকে নিখোঁজ করা হলে তা হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ, ইটস ক্রাইম। এই সরকারের ১৫ বছরে দুঃশাসনে কত মানুষের যে সন্তানহারা হয়েছেন, কত জন স্বামীহারা হয়েছেন, কতজন পুত্রহারা হয়েছেন তার কোনো হিসাব সঠিকভাবে আমরা করতে সক্ষম হচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্যে এই গুম, খুন, বেআইনিভাবে আটক করে তাকে হত্যা করা, বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড এমনভাবে বেড়েছে যেটা কোনো সভ্য সমাজে করতে পারে না।’
বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারের ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি গতকাল সিলেটে গিয়েছিলাম। নিজের চোখে না দেখলে বন্যার ভয়াবহতা সস্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না। মানুষ কষ্টে আছে এবং তাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া- তার কোনো ব্যবস্থা সরকার করে নাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘অথচ এই ‘তথাকথিত’, ‘অনির্বাচিত’ প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে গিয়ে ওপর দিয়ে ঘুরলেন, ঘুরে তিনি সার্কিট হাউজের হেলিপ্যাডে নেমেছেন। সেখানে ১০ জন লোককে টোকেন ত্রাণ দিয়েছেন এবং তারপরে তিনি বলেছেন, সব হয়ে যাবে। গতকাল রাত পর্যন্ত আমি যা খবর পেয়েছি এগুলো একেবারে কিছুই হয়নি।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেনাবাহিনী নামার পরে তারা সিস্টেমেটিক্যালি কিছু ত্রাণ রিমোট অঞ্চলগুলো পৌঁছাঁনোর চেষ্টা করছে। এ ছাড়া কিছু কাজ করছে বেসরকারি এনজিওগুলো।’
বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে।এবং ব্যাপকহারে কাজ করছে তারা।আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের নেতাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। একই সঙ্গে আমি অবিলম্বে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।’
দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আবারও সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’
এএজে
