ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

Motobad news

উত্তর জেলা বিএনপিতে বহিস্কৃত নেতা আফসার আলম বিতর্ক

উত্তর জেলা বিএনপিতে বহিস্কৃত নেতা আফসার আলম বিতর্ক
ছবি: বিএনপি নেতা ‍আফসার হোসেন ‍আলম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য পদে কো-অপট হওয়া আফসার হোসেন আলমকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। দল থেকে বহিস্কার হওয়া নেতাকে পুনরায় বিএনপিতে পদ দেওয়ায় বঞ্ছিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দুঃসময়ে দলের পাশ থেকে সড়ে দাঁড়ানো এই নেতাকে নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন জেলার নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে।

যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ। সবকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই তাকে সদস্য পদে কো-অপট করা হয়েছে বলে দাবি তার। এমনকি বিরোধী শিবিরের নেতারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উত্তর জেলা বিএনপি’র সদ্য সদস্য আফসার হোসেন আলমের।

বরিশাল উত্তর জেলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ‘আফসার হোসেন আলম সুযোগ সন্ধানি নেতা। এ জন্য তিনি ইতিপূর্বে উত্তর জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মেহেন্দিগঞ্জ থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার হন বলে জানান নেতাকর্মীদের।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘আফসার হোসেন আলমের রাজনীতি শুরু আওয়ামী লীগ থেকে। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত তিনি যুবলীগের উপজেলা সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে যোগদেন জাতীয় পার্টিতে। এরপর জাসদের মশাল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনে পরাজয় বরণ করা এই নেতা বিএনপিতে যোগদান করেন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৩ সালে তিনি বিএনপি’র মেহেন্দিগঞ্জ থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক হন। একই সময় উত্তর জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন আফসার হোসেন আলম। ১৯৯৮ সালে তিনি বহিস্কার হন বিএনপি থেকে।

কথিত রয়েছে, বিরোধী দলের সঙ্গে আতাত এবং অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের অপরাধে আফসার হোসেন আলমকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়। এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলাও করেন। কিন্তু আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলেও পরবর্তীতে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হয়নি বলে দাবি দলীয় নেতাদের। যে কারণে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরায়শীর পিডিবিতে যোগদান করেন বলে কথিত রয়েছে।

দলীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কোন জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপি’র পক্ষে ছিলেন না আফসার হোসেন আলম। তার দেখা মেলেনি দলীয় কোন কার্যক্রমেও। অথচ হঠাৎ করেই তাকে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য করা হয়েছে।

উত্তর জেলা বিএনপি’র একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি গঠিত উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিতে নাম দেয়া হয়েছিল আফসার হোসেন আলমের। কিন্তু পূর্ব বিতর্কের কারণে তাকে বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। উত্তর জেলা বিএনপি পুনরায় তাকে সদস্য করার জন্য কেন্দ্রে আবেদন জানালে সদস্য পদে কো-অপট করা হয় আফসার হোসেন আলমকে।

আলাকালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন দিপেন বলেন, ‘আফসার হোসেন আলম দলের বহিস্কৃত নেতা। কিন্তু তাকে উত্তর জেলায় সদস্য পদ দেয়ার বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। যারা কমিটি দিয়েছে তারা আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাদের বিষয় নিয়ে আমার কথা বলা ঠিক হবে না।

মেহেন্দিগঞ্জ পৌর বিএনপি’র সভাপতি জিয়াউদ্দিন সুজন বলেন, ‘আফসার হোসেন আলম বহিস্কার হয়েছিলেন এটা সঠিক। তবে পরবর্তীতে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হয়েছিল কিনা সেটা আমি নিশ্চিত নই। তাছাড়া পরবর্তীতে তিনি অন্য কোন দলে যোগদান করেছিলেন কিনা সেটাও জানা নেই।

তবে আফসার হোসেন আলম বলেন, ‘আমার পরিবার বিএনপি’র পরিবার। আমি ১৯৯০ সালে বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছি। আমাকে নিয়ে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র হয়েছে। তৎকালিন অর্থমন্ত্রী আবুল হোসেন এবং উত্তর জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদ ও সাবেক এমপি মোর্শারফ হোসেন মঙ্গু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তারা ষড়যন্ত্র করে আমাকে অবৈধভাবে দল থেকে বহিস্কার করেছিল। পরবর্তীতে সেই বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছেন বিএনপি’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি অভিযোগ করেন, ইতিপূর্বে যেসব কমিটি হয়েছে সেখানে আমাকে রাখা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে আমাকে কোনঠাসা করে রাখা হয়। এখন উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য হয়েছি। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক প্রার্থী হয়েছি। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পূর্বে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারাই নতুন করে অপপ্রচার করছে। আমি আহ্বায়ক হতে পারলে তাদের দল নিয়ে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে যাকে ধানের শীষের প্রতীক দেয়া হয়েছিল সেই প্রার্থীর পাশে আমি ছাড়া বিএনপির অন্য কোন নেতারা ছিলেন না। তারা বিরোধী পক্ষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সড়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র আমি তার পাশে ছিলাম। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আমার বাড়িতে বসে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ কারণে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা আমার বাড়িতে ভাঙচুরও করেছে।

এ প্রসঙ্গে উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘উত্তর জেলা বিএনপি’র কমিটি দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি যচাই বাছাই না করে কাউকে দলে পদ দেননি। আফসার হোসেন আলমের বিষয়েও তিনি নিশ্চিত হয়েই কমিটিতে সদস্য পদ দিয়েছেন।

তাছাড়া আফসার হোসেন আলমকে ইতিপূর্বে যেভাবে বহিস্কার করা হয়েছিল সেটা বৈধ উপায়ে ছিল না। থানা কমিটির নেতাকে বহিস্কারের ক্ষমতা কেন্দ্রের। অথচ তাকে বহিস্কার করেন উত্তর জেলা। যে কারণে সেই বহিস্কারাদেশ আর টিকেনি। আফসার হোসেন আলম বিএনপি’র রাজনীতি করেন। তিনি দলে সক্রিয় হতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।


কেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন