ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

পায়রার ভাঙ্গনে আতঙ্কিত আমতলী ও তালতলীর মানুষ

পায়রার ভাঙ্গনে আতঙ্কিত আমতলী ও তালতলীর মানুষ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার আমতলীর তালতলীর পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বসত বাড়িসহ কৃষি জমি হারোনোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পরেছে ৬ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত বাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়েছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে পায়রা নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় তালতলী উপজেলার নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুল বাড়িয়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধে আকস্মিক ভাঙ্গন শুরু হয়। ভাঙ্গনে দুটি অংশের প্রায় ২০০ মিটার ইতোমধ্যে পায়রা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পায়রার ভাঙ্গনের এ অবস্থা দেখে গ্রাম বাসীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা গ্রাম। ভাঙ্গনের আতঙ্কে এই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দারাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

গত দুই দশক ধরে ভয়ঙ্কর পায়রা তালতলী উপজেলার তেতুল বাড়িয়া এবং জয়ালভাঙ্গা  ও আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী এবং বৈঠাকাটা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে। ভাঙ্গনে সব হারিয়ে অনেকে গ্রামবাসী বাস্তচুত হয়ে ঢাকা কিংবা বরিশালের বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। নতুন করে বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা ও তেতুল বাড়িয়া গ্রামের ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ভাঙ্গন আতঙ্ক শুরু হয়েছে।

তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ নারী আম্বিয়া বেগম আক্ষেপের সুরে বলেন, বাবা মোগো গ্রাম পানিতে লইয়া গ্যালে মোরা কুম্মে থাকমু, কই যামু।

জেলে হামেদ বলেন, খালে খালি ভাইঙ্গা মোগো সব শ্যাষ কইর‌্যা দেছে। যেডু আছে হ্যা সব ভাইঙ্গা গ্যালে পোলা মাইয়া লইয়া কোন হানে যামু এহন হেই চিন্তায় আছি।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তেতুল বাড়িয়া গ্রামের এমাদুল নামের এক ব্যক্তি বলেন,  ৩ বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় বাড়ি। ৬ বারের ভাঙনে সব নদীতে লইয়া গ্যাছে। ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন ১ শতাংশ ফসলের জমিও নেই। কোনোমতে রাস্তার ধারে একটা ঘর বানাইয়া পোলা মাইয়া লইয়া  ঘুমাই। হেও আবার এহন ভয়ের মধ্যে আছি ভাঙনে আবার ঘরডা লইয়া যায় কিনা। 

এদিকে আমতলীর উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধ পায়রার ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সিডর আইলা রোয়ানুসহ একাধিক দুর্যোগে ভাঙ্গনে বালিয়াতলী গ্রামটি বিলীনের পথে। এখানে বসবাসরত শত শত বাসিন্দারা তাদের বসত বাড়িসহ কৃষিজমি হারিয়ে এখন নিশ্ব হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। একই অবস্থা চাওরা ইউনিয়নের বৈঠাকাটা গ্রামেরও। এই গ্রামটিও একাধিক বার পায়রার ভাঙ্গনে শত শত গ্রামবাসী জমি হারিয়ে এখন পথের ফকির হয়ে গেছে। সর্বশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে একটি রিংবাঁধ নির্মান করলেও তাও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। স্থানীয় গ্রাম বাসী ভাঙ্গন কবলিত এখানে বøক নির্মানের দাবী জানিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তালতলীর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হিমেল আহম্মেদ জানান, তেতুলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ভাঙ্গন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল তা কাজে আসছে না।

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, তালতলীর জয়াল ভাঙ্গা এবং তেতুল বাড়িয়া গ্রামের ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমতলীর বৈঠাকাটা ও বালিয়াতলী গ্রামের ভাঙ্গন রোধে বøক নির্মানের প্রস্তাবনা রয়েছে।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন