ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

Motobad news

বরিশালে বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাদের ঈদ পুনর্মিলনী 

বরিশালে বিএনপির পদবঞ্চিত নেতাদের ঈদ পুনর্মিলনী 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা ঈদ পুনর্মিলনী করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর স্ব রোডে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন। এতে দলের প্রায় ৪০০ নেতা-কর্মী অংশ নেন। সেখানে ৩০টি ওয়ার্ডের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। রাত ১০টার দিকে এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শেষ হয়। 

ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স¤প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তাঁর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী, তিনি যেভাবেই নির্বাচিত হোন না কেন, তিনি এমনভাবে কথা বলতে পারেন না।

সভায় মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক নগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির এক নেতার স¤প্রতি করা মন্তব্যের জবাব দিয়ে বলেন, ‘মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির এক শীর্ষ নেতা স¤প্রতি এক সভায় বলেছেন আমরা নাকি বিএনপি করি না। সভায় বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ আকবর হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তির লোক নই। আমরা বিএনপি, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের লোক।

স¤প্রতি গঠিত আহবায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা এত দিন প্রকাশ্যে পাল্টা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেননি। আড়াই মাস ধরে ঘরোয়াভাবে তাঁদের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স¤প্রতি নগরের ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এসব কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরাও যুক্ত হয়েছেন পদবঞ্চিত ব্যক্তিদের সঙ্গে।

অনুষ্ঠানে খিচুড়ি, মুরগি, ডিম ও কোমল পানীয় দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সভায় নগর বিএনপির সাবেক নেতা সৈয়দ আহসানুল কবির হাসান, আইনজীবী নেতা মহসিন মন্টুসহ নগরের ৩০ ওয়ার্ডের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাদ পড়া অংশের কয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন আহবায়ক কমিটিতে দলের পরীক্ষিত ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে বিগত দিনে নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে একটি পক্ষ দলে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চাইছে। এতে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ফলে বাদ পড়া অংশটি সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠের রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়।

মহানগরের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমরা ছাত্রজীবন থেকে শ্রম দিয়ে দলকে শক্তিশালী করেছি। এখন উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের কারণে দলের বাইরে। আমরা বঞ্চিত  নেতাকর্মীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছিলাম। এখন ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছি। দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘৩০টি ওয়ার্ড কমিটির যে প্রক্রিয়ায় ভেঙে দেওয়া হলো, তাতে দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে হয়নি।’

বাদ পড়া নেতারা গত জানুয়ারি থেকে চা-চক্র, মিলাদ ও সড়কে শোডাউন করে নিজেদের ক্ষোভ ও অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন। এবার বড় পরিসরে তা দিলেন। দলের কয়েকজন নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, এ অনুষ্ঠান তাঁদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার একটি বড় কৌশল।

বরিশাল মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে গত বছরের ৩ নভেম্বর আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। কমিটিতে মনিরুজ্জামান খান ওরফে ফারুককে আহবায়ক, আলী হায়দার বাবুলকে ১ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি।

পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটির জন্য কেন্দ্রে নাম জমা দেয়ার পর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তা নিয়ে আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩১ নেতা। তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি।

দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মহানগর কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। সংসদ সদস্য, হুইপ ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে তাঁর শক্ত প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় অংশটি আহবায়ক কমিটি করতে এককাট্টা হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফল হন। এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে সর্বশেষ বিএনপির মহানগর কমিটি দেওয়া হয়।

মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি নিয়ে চলা দ্বন্দ্ব ও বিতর্কের মধ্যে গত ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরে এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
 


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন