সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের কপালে চিন্তার ভাঁজ


সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য আজ শুক্রবার (২০মে) থেকে দক্ষিনাঞ্চল এ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। নিষিদ্ধকালীন সময়ে সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যে কোন প্রজাতির মৎস্য আহরণ থেকে বিরত থেকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দেশের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। ইতিমধ্যে জাল-ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরছে বরগুনার সমুদ্রগামী জেলেরা।
৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে বরগুনার ২৭ হাজার ২৭৭ জন জেলেকে ১ হাজার ৫২৭ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দেয়া হবে। এসময় যাতে অসাধু জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমুদ্রে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে জেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) রাতে সদর উপজেলার নলী বন্দর,তালতলী উপজেলা ও পাথরঘাটা উপজেলার নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া সকল ট্রলার তীরে ফিরেছে। পাথরঘাটার সমুদ্রে যাওয়া শত শত মাছ ধরার ট্রলার মৎস অবতরন কেন্দ্রের ঘাটে নোঙর করা রয়েছে। জেলেরা জাল ও মাছ সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ট্রলার মেরামত ও রঙ করানোর জন্য ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার নলীর জেলে হারুন মৃধা বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের এমন নির্দেশনা মেনে চলবো আমরা। তবে এই দুই মাসেরও বেশি সময় সাগরে না যাওয়ায় আর্থিক অনটনে ভুগবো আমরা। তাছাড়া চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
তালতলীর ফকির হাটের জেলে জাফর বলেন, অবরোধ শুরু হওয়ার আগেই ট্রলার নিয়ে ঘাটে এসেছি। এখন ট্রালর মেরামতের জন্য ডকইয়ার্ডের উঠিয়েছি। আমাদের দেশে অবরোধ চলে আর ভারতীয় জেলেরা এখন আমাদের জল সীমায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন থাকবে যাতে বাংলাদেশের জলসীমানায় কোন ভারতীয় ট্রলার আসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখে।
পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামের জেলে কালাম বলেন, মোর সংসার চলে এই মাছ ধরার টাহা দিয়া। মাছ ধরা ছাড়া আর কোন কাম নুই পারি না ছোড বেলা থেইক্কা এই মাছ ধরা হিকছি।এহন সরকার আইজগো হইতে গোনে অবরোধ দেছে এই দুই মাস মোর পোলাপান লইয়া মুই কি খামু জানি না। সরকার তে খালি কয়ডা চাউল দেবে আনে,খালি কি চাউল খাইয়া থাকমু আম্মেরাই কন ভাই। মোর সরকারে কাছে এউক্কাই দাবি যাতে চাউলের লগে লগে মোগো জাইল্লাগো কিছু আর্থিক সাহায্য হরে।
বরগুনা জেলা মৎসজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শত শত ট্রলার ইতিমধ্যে তীরে ফিরে নোঙর করেছে। বরগুনা উপকূলের দেড় লাখ মানুষ জেলে পেশায় নিয়োজিত। দুঃখের বিষয় হচ্ছে সরকারি তালিকায় জেলে সংখ্যা ৩৭ হাজার ৭৪ জন। বাকি এক লাখেরও বেশি জেলে সহায়তা পান না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম থাকায় আজ রাত ১২ঃ ০১ মিনিট থেকে সাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হলো।এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সসময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ। এ সময়ে যেসব জেলেরা সাগরে যাবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আর্থিক সঙ্কটে পরবে জেলেরা। জেলার ২৭ হাজার ২৭৭ জন জেলের জন্য ১ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি জন জেলে ৬৫ দিনে ৮৬ কেজি চাল পাবেন। এসব চাল জুনের মধ্যে বিতরন করা হবে৷ সদরের ও অন্যান্য উপজেলার জেলেদের মাঝে তা বিতরন করা হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের সমুদ্র সীমায় মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সাল থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এমইউআর
