অভিযানে দু'-তিন দিন ঠিকঠাক, তারপর যা তা-ই


বরগুনার বেতাগীর বিষখালী নদীর বেতাগী-কচুয়া পয়েন্টে খেয়াঘাটে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পারাপারে নির্ধারিত ভাড়ার দশ গুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া যাত্রী হয়রানি, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক দ্বারা খেয়ার ট্রলার পরিচালনা, অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিযুক্ত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারসহ পাহাড়সম অভিযোগ তো রয়েছেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো খেয়া পরিচালনা করছেন ইজারাদার। যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে টোল আদায়কারীরা খারাপ ব্যবহার এবং কখনো কখনো লাঞ্ছিত করছেন যাত্রীদের।
ঘাট ইজারাদার স্থানীয় লোক হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করে বিষখালী নদীর কচুয়ার পাড় থেকে ভাড়া আদায় করছেন। ভাড়া আদায় নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া এমনকি মারধরের ঘটনা ঘটছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয় ক্ষুব্ধ হয়ে ইতিপূর্বে বরগুনা জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নাহিদ মাহমুদ লিটু উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে পুঁজি করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দশ গুণ বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যাত্রী আব্দুর রহিম জানান, ভাড়া আদায়কারীরা সন্ত্রাসীর ভূমিকা পালন করে। এমনকি তারা ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষদের সাথেও দুর্ব্যবহার করতে কুণ্ঠা বোধ করেন না।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রী পারাপারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঁচ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ঈদের সময় ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি পারাপারের নিয়ম থাকলেও প্রায় সময়ই টাকা আদায় করা হয়। ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ৫ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়।
সরকারি নিয়মানুসারে ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পারাপারের নিয়ম, কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরেই কেউ ওই বিষখালী নদী পার হতে চাইলে তার কাছ থেকে রিজার্ভ ৫০০-৮০০ টাকা আদায় করা হয়।
কাঠালিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, মাত্র দুটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার যাত্রী পারাপার করে। এতে বেশির ভাগ সময় শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বাড়ছে ভোগান্তি ও হয়রানি।
এ বিষয় জানতে চাইলে টোল আদায়কারী মো. রুস্তম আলী জানান, অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। শিক্ষার্থীদর কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় এবং অনেকে ভাড়াও দেয় না। মোটরসাইকেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের বিষয় তিনি এড়িয়ে যান।
শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকারের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করলেও অবস্থা যেই-সেই। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পুনরায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি করেছি।
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, অভিযান চালিয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের দু-তিন দিন ঠিকঠাকভাবে চলে। তারপর যা তা-ই হয়ে যায়।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে আদায় করা হলে ইজাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাধিক যাত্রীর দাবি, তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রতিকার খুবই জরুরি।
এইচকেআর
