ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম

অভিযান-১০ দুর্ঘটনা: ঈদ যেন বাড়িয়ে দিল বেদনা

অভিযান-১০ দুর্ঘটনা: ঈদ যেন বাড়িয়ে দিল বেদনা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের মুক্তা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন স্বামী রিয়াজ হাওলাদার। কাজ করতেন ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। গত ২৩ ডিসেম্বর ২৮ দিনের সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে দেখতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে চড়েন তিনি। ওই দিন লঞ্চটি ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে রাত ৩টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা মারা যান তাঁদের মধ্যে ছিলেন রিয়াজও। 

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন মুক্তা। দুই সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে তাঁর। স্বামীকে হারানোর পর থেকেই তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে বিষাদের কালো মেঘ। ঈদের আনন্দ তো দূরে থাক এখন দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে তাঁদের। 


শুধু রিয়াজ হাওলাদারের পরিবারই নয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রিয়জন হারিয়েছেন অনেকেই। নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারে এ বছরের ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। কেউ খুঁজছে নিখোঁজ ভাইকে, কেউ খুঁজছে বোন আবার কেউ খুঁজছে বাবা-মাকে। স্বজন হারানো পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আনন্দ। বরং ঈদের আগমন যেন বেদনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। 

মঙ্গলবার ঈদের দিন সকালে সুগন্ধা ট্র্যাজেডিতে নিহত রিয়াজের গ্রামের বাড়িতে যায় এ প্রতিবেদক। বাড়িতে গিয়ে রিয়াজের কথা মনে করিয়ে দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম। শোকার্ত স্ত্রীকে এ সময় সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রতিবেশীরা।   

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ২৮ দিনের ছেলের মুখ দেখতে সেদিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রিয়াজ। কিন্তু ছেলের মুখ আর দেখতে পারেননি। সেই ছেলের বয়স এখন পাঁচ মাস। আমাদের ঈদ আনন্দ তাঁর বিদায়ের সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে।

দুই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন মুক্তা বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। দুই ছেলে আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে অনেক অভাবে সংসার চলছে। ঈদ তো পরের কথা, ছেলেদের কীভাবে মানুষ করব এখন সেই চিন্তাই করি এখন।’

বাবা-মা ছেলে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না। ছেলের কথা মনে করিয়ে দিতেই কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যান মা পিয়ারা বেগম। ঈদুল ফিতরের এমন আনন্দঘন মুহূর্তে রিয়াজ নেই, ভাবতেই পারছেন না বাবা আব্দুল কাদের। ছেলে নেই তো ঈদও নেই। বৃদ্ধ বয়সে শেষ সম্বল একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তাঁরা। সেই সঙ্গে ছোট ছোট দুটি নাতি ও পুত্রবধূর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাঁদের। 

রিয়াজের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, ‘সামান্য যে জমিটুকু আছে তা চাষাবাদ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। যত দিন শরীরে শক্তি আছে তত দিন সংসার চলবে। কিন্তু এরপর সংসার কীভাবে চলবে। নাতিদের ভবিষ্যৎ কী হবে সে আতঙ্কে দিন কাটছে এখন।’

মুক্তার মতো সুগন্ধা ট্র্যাজেডিতে অনেকে তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বহু পরিবারেরই অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে। সরকারি সহযোগিতা বড় দরকার তাঁদের।

উল্লেখ্য, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় ৪৯ জন। এর মধ্যে ১৭টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে বরগুনায় ২৩ ও ঝালকাঠিতে একজনকে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আটজন।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ