ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্রীর কাগজপত্র চুরি করে অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি

ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্রীর কাগজপত্র চুরি করে অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ঝালকাঠিতে ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে (১১) উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তাঁর কাগজপত্র চুরি করে অন্য একটি মাদ্রাসায় অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার দেউলকাঠি গ্রামের শওকত হোসেন খান (৩৫) নামের এক যুবক মেয়েটির ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এ কাজ করেন। এ ঘটনা জানতে পেরে ওই ছাত্রীর মা শওকতের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি থানায় অভিযোগ দেন। 

দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি থাকায় মেয়েটির শিক্ষাজীবন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, তিনি ঝালকাঠি শহরের বিকনা এলাকায় বসবাস করেন। তাঁর স্বামী একজন সার্ভেয়ার। তাদের দুই সন্তান। বড় মেয়ে চামটা বি.কে. ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। 

তাদের প্রতিবেশী বজলুর রহমান খানের ছেলে শওকত হোসেন খান মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় ওই মেয়েকে প্রায়ই উত্যক্ত করতো শওকত। বিষয়টি মেয়ে তাঁর বাবা মাকে জানায়। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি ছেলের পরিবারকে জানানো হয়। এর পরেও সে ষষ্ট শ্রেণির ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন মেয়ে মা। 

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাসা থেকে কাগজপত্র চুরি করে শওকত।  মেয়েটির কাগজপত্র নিয়ে দেউলকাঠি রহমানিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি করায় সে। ভর্তির সময় শওকত তাঁর ভাগ্নির কাগজপত্র বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানায়। কিছুদিন পরে শওকত মেয়েটির পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কাগজপত্র চুরির বিষয়ে থানায় মামলা করলে উল্টো মানহানির মামলা করা হবে বলে ভয় দেখায়। মেয়েটিকে এতিমখানায় ভর্তি করার প্রচারণা চালাতে থাকে ওই যুবক।  

মেয়ের মা অভিযোগ করেন, আমার ১১ বছরের মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় শওকত। তাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে বলে। মেয়ে সবকিছু আমার কাছে বলে দেয়। সে শওকতের ভয়ে বাড়ির বাইরেও নামে না। আমরা বিষয়টির প্রতিবাদ করায় শওকত আমার ঘর থেকে কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। আমার মেয়ে একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর কাগজপত্র নিয়ে গ্রামের বাড়ির একটি এতিমখানা ও মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করায় শওকত। আমার মেয়ে ও পরিবারের কেউ এ বিষয়ে জানতাম না। 

পরে যখন শুনেছি, আমি মাদ্রাসায় গিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি শওকত শুধু কাগজপত্র জমা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়–য়া আমার মেয়েকে অস্টম শ্রেণিতে ভর্তি করে। আমার প্রশ্ন কিভাবে অভিভাবক ও ছাত্রীকে ছাড়াই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভর্তি করলো! আমার মেয়েকে আমি স্কুলে পড়াই, মাদ্রাসায় নয়। এতে আমাদের মন ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে বখাটে শওকতের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।  

দেউলকাঠি রহমানিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অভিভাবক ও ছাত্রীর উপস্থিতি ছাড়া ভর্তি করানোর নিয়ম নেই। মাদ্রাসার সুপার কিভাবে অন্য একটি ছেলের কাছ থেকে কাগজপত্র রেখে ভর্তি করালেন এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।  

মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নাসির উদ্দিন খান বলেন, ভর্তি করায় মাদ্রাসার কেরানী আবদুল হাকিম। বিষয়টি আমার নলেজে নেই। পরে জানতে পেরে কেরানীকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন শওকত আপন ভাগ্নি হয় বলে মেয়েটির কাগজপত্র জমা দিয়েছে। মেয়ের বাবার কথা জানতে চাইলে, শওকত বলে সে জেলে আছে, আমার বোন আমাকে পাঠিয়েছে। ওই মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে, এখন একটি রেজুলেশন করে তাঁর ভর্তি বাতিল করে দেওয়া হবে। এখন সবকিছুই অনলাইন সিস্টেম, অনলাইন থেকেও তাঁর নাম বাতিল করতে হবে। 

এ ব্যাপারে শওকত হোসেন খান বলেন, আমি ওই মেয়েকে কখনো উত্যক্ত কমিনি। তাদের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। আমি মেয়েটিকে কোথাও ভর্তি করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রভাষ মলি­ক বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের একজন উপপরিদর্শককে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, একজন শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে পারবে, দুটি প্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হতে পারবে না। 

এখন অনলাইনে সবকিছু ধরা পড়ে যায়। যদি দুটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হয়, তাহলে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। যদি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনই হুমকির মুখে পড়বে। 
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন