বরিশালে তরমুজ ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে ডাকাতি


মৌসুমি ফল তরমুজ। গরমের তাপদহ ও রমজানে বেড়েছে চাহিদা। এক সপ্তাহ আগে তরমুজের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী দামে। রমজানের প্রথমে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হত ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। সেই তরমুজ ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। দেশে তরমুজের ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয়েছে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায়।
কিন্তু খোদ বরিশালেই তরমুজের দাম এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ব্যবসায়ীরা কম দামে পিস হিসেবে তরমুজ ক্রয় করলেও খুচরা বাজারে ক্রেতাদের নিকট কেজি দরে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করছেন। তরমুজের আড়তদাররা চাষীদের কাছ থেকে মাঝারি থেকে বড় তরমুজের প্রতি পিস কিনছেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। কিন্তু বিক্রি করছেন কেজিতে। নগরীর রূপাতলী, পোর্ট রোড, ফলপট্টি, জেল খানার মোড়, নতুন বাজার, নথুলাবাদ বাসস্ট্যান্ড, চৌমাথা বাজার, বাংলা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। ভালো মানের তরমুজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এতে একটি ভালো তরমুজ ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে। ফলে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য তরমুজ কেনা যেন এক বিলাসিতার নাম। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ির তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় মোট ২৪ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সর্বোচ্চ ফলন হয়েছে পটুয়াখালী জেলায়। এ জেলায় ১৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের ফলন হয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর পটুয়াখালী জেলায় কিছু কম জমিতে তরমুজের আবাদ হলেও ফলন গত বছরের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে দাবি কৃষি বিভাগের।
এদিকে, পটুয়াখালী জেলার বাইরেও বাকি পাঁচটি জেলায় কম-বেশী তরমুজের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৬৩ হেক্টর, পিরোজপুর জেলায় ১৪৮ হেক্টর, ঝালকাঠি জেলায় ৩৫ হেক্টর, বরগুনা জেলায় ৪ হাজার ৪৩ হেক্টর এবং ভোলা জেলায় ৫ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। বরিশালে তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ার পরেও এমন চড়া দামে বিক্রি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। রূপাতলী আবাসিক এলাকার ২৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজমুল হাসান জানান, তরমুজের দাম হঠাৎ করে বাড়ার কারণ বুঝি না। আর কেজি দরে বিক্রি করতে দেখেনি আমার বাপ-দাদারাও। এটা তো কোন বিদেশি ফল না যে আমদানি করতে হয় অনেক খরচ পড়ে, বরিশালেই তরমুজ উৎপাদন হচ্ছে। আর ক্ষেতে তো পিস হিসেবেই কৃষকরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।
তাহলে কেজি হিসেবে এমন কসাইর মত বিক্রি করবে কেন? তরমুজ পিস হিসেবে পাইকারি ক্রয় করার কথা স্বিকার করে নগরীর র”পাতলির তরমুজ ব্যবসায়ী হৃদয় হোসেন বলেন, আজনার চেয়ে বাজনা বেশি। মোকামেই তরমুজের দাম বেশি, গাড়ি ভাড়া, লেবার খরচ বেশি। ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের তরমুজ গড়ে ছোট-বড় পিস কেনা পড়েছে ৪০০ টাকা। এর মধ্যে বড়-ছোট সাজিয়ে দেওয়া থাকে। একটা লটে তরমুজ থাকে এক হাজার থেকে বারশ’। ৬ থেকে ৭ কেজি ওজনের ভালো তরমুজের শত ৪০ হাজার টাকার কমে কেনা যায় না।
তিনি জানান, ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজের শত ৩০ হাজার টাকা, ১ থেকে ২, আড়াই কেজি ওজনের তরমুজের শত ২০ হাজার টাকা। এত দাম হলে কিভাবে মানুষ কিনবে জানতে চাইলে বলেন, মোকামেই তরমুজের দাম বেশি। তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি। বরিশালে তরমুজ নাই তাই, খুলনা, বরগুনা থেকে এবার তরমুজ এনেছি। ভোলা, বাউফলের তরমুজ সরবরাহ নাই; তাই খুলনার মোকাম থেকেও কিনতে হচ্ছে। খুলনায়ও ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাগব করতে বাজার মনিটরিং এর জন্য প্রতিদিন ৫ টি টিম কাজ করে। অতিরিক্ত দামে তরমুজ বিক্রির জন্য সোমবার ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।
কোথাও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য দেয়ার আহŸান জানান তিনি। প্রসঙ্গত, সোমবার বিকালে বরিশালে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করায় ১৪ ব্যবসায়ীর ৮ জনকে ৬ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৬ জনকে ৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। নগরীর বিভিন্ন বাজারে পৃথক এ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবদুল হাই ও রয়া ত্রিপুরা। তবে এই অভিযানের পরেও গতকাল মঙ্গলবার নগরীর ররূপাতলীতে আগের সেই কেজি দরে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এইচকেআর
