নেছারাবাদে দখলদারদের পেটে যাচ্ছে সন্ধ্যা নদী


দ্বীপাঞ্চল নামে খ্যাত বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর একটি জেলা। যার চারপাশেই রয়েছে অসংখ্য নদী। নদী বেষ্টিত এই জনপদের বিশেষ একটি নদীর নাম সন্ধ্যা। যে নদীটির চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাদের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। তবে নদী দখলদারদের জন্য যেমন নদী আটকে যাচ্ছে তেমনি দখলদারেরা খাচ্ছে স্থানীয়দের বসত ভিটাও। নেই কোন প্রতিকার বা প্রতিবাদ যাতে ক্ষত নিয়েই বয়ে চলতে হচ্ছে পিরোজপুরের নেছারবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সন্ধ্যা নদীকে।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা বানিজ্য বা শিল্পাঞ্চল নামেই প্রসিদ্ধ। আবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক তাতে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ করেছে। জগৎপট্টি, ইন্দেরহাট, মিয়ারহাট, বরচাকাঠি, জগন্নাতকাঠি বন্দরসহ বেশ কিছু এলাকা জুড়ে চলছে সন্ধ্যা নদী দখল বানিজ্য। বছরের পর বছর ধরে উপজেলার নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডক ইয়ার্ড, বহুতল ভবন, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য দোকানপাট। কেউ প্রতিবাদ করতে এলে দখলদারদের পেটে যাচ্ছে তাদের বসত ভিটেও। প্রাণের ঝুঁকি তো থাকছেই একের পর এক মামলা দিয়ে করা হচ্ছে হয়রানি। বেশ কয়েক জন স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পটুয়াখালী থেকে আসা গফ্ফার মৃধার ছালেহিয়া ডক ইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ডক ইয়ার্ডদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ধ্যা নদীর তীরের অধিকাংশ দখলের অভিযোগ।
জানা যায়, ২০১৫ সালে একবার পরিবেশ অধিদপ্তর ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তার তোয়াক্কা করেননি ছালেহিয়া ডক ইয়ার্ডের গফ্ফার মৃধা। এরপর আর পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে এসব অবৈধ দখলদারিদের বিরুদে তেমন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হন নি ডক ইয়ার্ড মালিকদের কেউ।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সমন্নয়ে দুরদুরান্ত থেকে ট্রলার নৌকা আসে যারা এখান থেকে মাল উঠায় ও নামায় সেই জায়গাকে তারা লিজের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে। নদীর অনেকাংশ দখল করে তারা সেখানে ডকইয়ার্ড নির্মান করেছে। যেগুলো করার কারনে স্বরূপকাঠীর সৌন্দর্য সৌরভ বিলপ্তির পথে। আমরা জগন্নাথকাঠীবাসী এই ভূমিদস্যূদের হাত থেকে রক্ষা পাইতে চাই। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি আমাদের দখল মুক্ত করে স্বরূপকাঠীর এই উন্মুক্ত পরিবেশকে সঠিকভাবে বজায় রাখবেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী হযরত আলী হিরু জানান, এখানকার কিছু ভূমিদস্যুরা জমির মতো নদী দখল করছে। এতে দিন দিন নদীগুলোর নাব্যাতা সংকট হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এইভাবে যদি নদী খাল দখল হয়ে যায় তাহলে স্বরূপকাঠীর পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তাই এই নদী খাল দখল মুক্ত করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, আমাগো নদীর জমি দখল করছে। আমাগো বাড়ি ঘর দখল করছে। স্থানীয় রাবেয়া খাতুন বলেন, ছারছীনার গাফফার মৃধারা এসে যে নদী দখল করছে সাথে আমাগো জমি চাষের চারা কলম ভাংচুর করছে। দোকানডা ভাইংগা হালাইছে আনতে দেয় নাই।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন জানিয়েছেন, সারা বাংলাদেশে নদীর পাড়কে বাচিয়ে রেখে নদী উচ্ছেদ রোধ করা এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২১০০ সালে যে ডেল্টা প্লান বাস্তবায়ন করার একটি অঙ্গিকার। নদীকে আমাদের বাচিয়ে রাখতে হবে, নদী কাউকেই দখল করতে দেয়া যাবে না। নেছারাবাদ উপজেলায় সন্ধ্যা নদীর দুই পাড়ে যে জায়গাগুলো দখলে রয়েছে তার ব্যাপারে মাননীয় সংসদ ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম স্যারে নির্দেশনা রয়েছে কোনভাবেই নদী দখল হতে দেয়া যাবে না। কঠোরভাবে দমন ও দখল উচ্ছেদ করতে হবে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছি। যাতে কেউ নদী দখল করে না রাখতে পারে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাথে শীঘ্রই কথা হয়েছে। যারা উপজেলায় স্টেক হোল্ডার রয়েছে সবাইকে নিয়ে চেষ্ট করবো যাতে উপজেলার নদী শীঘ্রই দূষণ ও দখল মুক্ত করতে পারি সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।
এইচেকআর
