ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news
মানবতার ফেরিওয়ালা

করোনাকালে ঝালকাঠিতে তিন মুফতির নেতৃত্বে হচ্ছে লাশ দাফন

করোনাকালে ঝালকাঠিতে তিন মুফতির নেতৃত্বে হচ্ছে লাশ দাফন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবার। প্রতিবেশীদের চাপের মধ্যে গৃহবন্দিও হয়েছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা। লাশ নিয়ে দুর্বিষহ রাত কাটাতের হয়েছে তাদের। এ অবস্থায় ঝালকাঠির নলছিটিতে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনজন মুফতি ও দুইজন হাফেজের নেতৃত্বে গঠিত শাবাব ফাউন্ডেশন নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

করোনা দুঃসময়ে লাশ দাফন করে ইতোমধ্যেই সংগঠনটি মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি পেয়েছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।  জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় শনিবার পর্যন্ত এক হাজার ৫৫৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। 

মৃত ব্যক্তিদের দাফন কার্য সম্পন্ন করে যাচ্ছে শাবাব ফাউন্ডেশন। নলছিটির মুফতি জায়নুল আবেদীন, মুফতি হানযালা নোমানী ও মুফতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ১৩ সদস্য নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এ কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তারা করোনায় মৃত ১৯ জনের লাশ দাফন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দুইজন নারীর লাশ। নলছিটি থেকে তাদের যাত্রা শুরু হলেও জেলার যেকোন স্থানে মৃত ব্যক্তির দাফন করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে শাবাব টিম। তবে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব রয়েছে তাদের। 

পর্যাপ্ত পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রীর দাবি জানিয়েছেন টিমের সদস্যরা। করোনা দুঃসময়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফনে এগিয়ে আসায় শাবাব ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মৃতের স্বজনরা। শাবাব ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা। 

পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দিয়ে সংগঠনকে কাজ করার উৎসাহ দিচ্ছেন অনেকেই। করোনাকালে মৃতের লাশ দাফন করে মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি পাওয়া তিনজন মুফতির নেতৃত্বে শাবাব ফাউন্ডেশন মানবতার কল্যাণে কাজ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। মুফতি হানযালা নোমানী বলেন, সমগ্র বিশ্বে করোনাভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অনেক স্থানে দেখেছি মৃত মানুষের দাফনেও কেউ এগিয়ে আসছে না। আমাদের দেশেও এটা লক্ষ করা গেছে। 

এ অবস্থায় আমরা স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে আলোচনা করে শাবাব ফাউন্ডেশন গঠন করি। আমাদের কাজ হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত মানুষের গোসল, জানাজা ও দাফন করা। এটা নিজ উদ্যোগে করা হচ্ছে। আল­াহকে রাজিখুশি রাখার জন্যই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত ১৯ জনের দাফন সম্পন্ন করেছি।  মুফতি জায়নুল আবেদীন বলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মানুষের দাফন করতে গিয়ে প্রথমে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। এখন আর এ অবস্থায় পড়তে হয় না। 

করোনায় আক্রান্ত মানুষের যখন গোসল, জানাজা ও দাফনে কাউকে পাওয়া যায় না, সেখানেই শাবাব ফাউন্ডেশন হাজির হচ্ছে। কোন বিনিময় ছাড়াই আমরা সেচ্ছায় এ কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পর্যাপ্ত পিপিই নেই।  শাবাব ফাউন্ডেশনের সদস্য হাসিবুল হাসান সবুজ ও শাহাদাত ফকির বলেন, সম্পূর্ণ নিজেদের ব্যক্তিগত খরচে আমরা শাবাব ফাউন্ডেশন এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী ১৯ জনের লাশ দাফন করেছি। 

ঝালকাঠি জেলার মধ্যে আমাদের কেউ খবর দিলেই টিম নিয়ে হাজির হচ্ছি। মানবতার কাজ করতে পেরে নিজেদের কাছেই ভালো লাগছে। শুধু আল্লাহর প্রশংসা পাওয়ার জন্যই আমরা এ কাজ করছি। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পিপিই সরবরাহ করেছি। প্রয়োজন হলে আরো দেওয়া হবে। তাঁরা যে কাজটি করছেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। নিজেরা জীবনের ঝুুঁকিনিয়ে করোনা আক্রান্ত মানুষের দাফন করে যাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে সবসময়।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন