সুগন্ধার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে কয়েকটি গ্রাম


আমার একটা বাড়ি নদীতে চলে গেছে, জমি ছিলো ৯ কুড়া সব সুগন্ধা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাপ দাদার যে কবর ছিলো তাও নদীতে। বর্তমানে আমার চাচতো ভাইর জমিতে কোনরকম একটু ঘর উঠিয়ে থাকি। আমাদের কেউ কোন খোঁজ খবর নেয় না। আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। কথা গুলো বলছিলেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামের সুগন্ধা নদী তীরের বাসিন্দা বৃদ্ধা সৈয়দ আলী ।
সুগন্ধার ভাঙনে ৫০ বছর ধরে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন জনপদ। তীব্র ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের ১০ গ্রামে শত শত পরিবার। দফায় দফায় বাড়ি ছেড়েও রক্ষা মিলছে না। তাইতো বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আতঙ্কে কাটে নদীপাড়ের মানুষের দিনরাত।
জানা গেছে, সুগন্ধা নদীর পাড়ের শতাধিক পরিবারকে কয়েক দফায় ভিটামাটি ছাড়তে হয়েছে। রাক্ষুসে নদী সবকিছু কেড়ে নেওয়ায় শত শত পরিবার আজ এলাকা ছাড়া। যারা রয়েছেন, তারাও ভাঙনে সব হারিয়ে দরিদ্রতায় দিন কাটাচ্ছে। এক সময়ের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নদীর ভয়াল গ্রাসে আজ সব হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
উপজেলার তিমিরকাঠি, ভৈরবপাশা, খোজাখালি, মল্লিকপুর, সিকদাড়পাড়া, বহরমপুর, ষাটপাকিয়া, কাঠিপাড়া, দরিরচর ও অনুরাগসহ ১০টিরও বেশি গ্রামকে নদী গ্রাস করে যাচ্ছে গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এর মধ্যে খোজাখালি ও দরিরচর গ্রাম দুটি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এ নিয়ে তিন বার ভিটা পরিবর্তন করেছি। বারবার বাড়ি ছাড়ি আর নদীও যেন ভেঙে ভেঙে পিছু পিছু আসে। এটা এখন জীবনের একটি অধ্যায় হয়ে গেছে, যা হয়তো কখনো আর শেষ হবে না।
নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, স্কুল মাদ্রাসা, বাজার এবং অনেক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্যাস বহনকারী জাহাজ গুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাঙনের তিব্রতা বেড়েছে। তবে সুগন্ধা নদীর সরই অঞ্চলটি ভাঙন রোধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন, ঝালকাঠি ও নলছিটির ভাঙন এলাকা আমাদের প্রাথমিক জরিপ সম্পাদনা করা হয়েছে। ডিপিপি কার্যক্রম অনুমোদন পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।
আরজেএন
