সৈকত রক্ষার জিও ব্যাগে পর্যটকদের মৃত্যুফাঁদ


কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষার নামে জিরো পয়েন্টের দু’পাশে জিও ব্যাগে বালু ভরে জরুরিভাবে তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ জন্য চার বছরে ৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে সৈকতেরই বালু। পরে সে ব্যাগের বড় অংশই বিলীন হয়ে গেছে। এ উদ্যোগের ফলে বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় বাড়ছে দুর্ঘটনা। পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এরপরও জিও-টিউব ও ব্যাগ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ অব্যাহত রেখেছে পাউবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বালু ক্ষয়ের কারণে প্রতি বছর সৈকতের প্রস্থ কমে আসছে। বিলীন হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ সময়ে সৈকত রক্ষার নামে পাউবো ৮ কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে তেমন কাজে আসেনি। উল্টো খানাখন্দের কারণে পর্যটকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
বরিশাল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক কাজী সাইফুল বলছিলেন, তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুয়াকাটা এসেছেন। কিন্তু জিরো পয়েন্ট থেকে নামতে গিয়ে ছেঁড়া-ফাটা বস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিছু এলাকায় খানাখন্দ রয়েছে, যাতে সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় হতাশ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটক ব্যবসায়ীদের দাবি– গ্রোয়েন বাঁধের মাধ্যমে সৈকত রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা নিতে হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলে পাউবো। এগুলো কিছুদিন পর সমুদ্রে বিলীন হয়। ২০২১ সালে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং গত বছর ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ফের জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হয়েছে। সেগুলো কাজে না এলেও চলতি বছর ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব ও ৩৭ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ করা হচ্ছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী কেএম বাচ্চু বলেন, সমুদ্র থেকে বালু কেটে টিউবে ভরা হয়। জোয়ারের সময়ে বালু ক্ষয় হয়ে বস্তার মাঝে খানাখন্দ তৈরি হচ্ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের কুয়াকাটা জোনের পরিদর্শক হাচনাইন পারভেজ বলেন, বস্তা ও টিউবে যে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক পর্যটকের হাত-পা ভাঙাসহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। গত বর্ষায় ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে সৈকত রক্ষায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিচ্ছে পাউবো অথচ আবারও ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও টিউব বসাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শিডিউলে অন্য স্থান থেকে বালু এনে জিও টিউব ও ব্যাগ ভরার কথা রয়েছে। কিন্তু সৈকতে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে ভরা হচ্ছে। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসন এটি বন্ধ করে দিলেও পরে বাইরে থেকে বালু আনার শর্তে কাজ করছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই পাউবো সৈকত রক্ষার নামে অস্থায়ী প্রকল্প হাতে নেয়; যা কোনো কাজে আসে না। কুয়াকাটায় দরকার স্থায়ী প্রকল্প নেওয়া। এতে সৈকত রক্ষা পাবে, সৌন্দর্যও বাড়বে। এখন যা করছে তা অর্থের অপচয়। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সৈকত রক্ষায় যে পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে, এগুলো সাময়িক। এক বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে পাউবোর কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলীদ বলেন, চার বছরে জিও টিউবের মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে সৈকত রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ভাঙন রোধ হচ্ছে। পর্যটকদের দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ও সৌন্দর্য নষ্টের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ৭৫০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং দুর্ঘটনাও কমবে।
কুয়াকাটা সৈকত ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও ইউএনও জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সৈকত রক্ষায় জিও টিউব ও ব্যাগ ব্যবহার নদী রক্ষার ডিজাইনে করা হচ্ছে। এগুলো করা উচিত সমুদ্র রক্ষার ডিজাইনে। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য তদারকি চলছে।
এইচকেআর
