ধেয়ে আসছে ‘মোখা’ পিরোজপুরে ১৪৪ কিলোমিটার বেরীবাঁধ অরক্ষিত


ধেয়ে আসছে বঙ্গপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। পিরোজপুরে ৮নং বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আতংকিত হয়ে পড়েছে জেলার চরাঞ্চল ও নদীপাড়ের মানুষ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, ‘মোখা’ মোকাবেলায় পিরোজপুরে প্রস্তুত রয়েছে ২১৩টি সাইক্লোন শেল্টার ও ১৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। ৭টি উপজেলায় একটি করে ৭টি এবং জেলা সদরে একটি মোট ৮টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। তাদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে জিআর ৪০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়াও দুর্যোগ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে জরুরী ভিত্তিতে সেবা দেওয়ার জন্য সিপিবির ১ হাজার ৭০০ সদস্য ও রেড ক্রিসেন্ট এর ৩৫০ জন সদস্য প্রস্তত রয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান, তাদের মোট ৬৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধের পর্যাপ্ত যোগান তাদের রয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন উপকুল এলাকায় বেরীবাঁধ না থাকায় আতংঙ্কে উপকুলের কয়েক লাখ মানুষ। জেলার ৭ টি উপজেলার বিভিন্ন উপকুলীয় এলাকায় টেকসই বেরীবাঁধ না থাকার তলিয়ে ক্ষতি হয় ফসল ও মাছসহ মানুষের জীবন।
পিরোজপুর জেলার ৭টি উপজেলায় কঁচা, বলেশ্বর, সন্ধ্যা, কালীগঙ্গা সহ ছোট বড় নদী রয়েছে। আর এ নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে লোকালয় হাট বাজার ও শিল্পকারখানা। মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, সাপলেজা, টিকিকাটা, মাঝেরচড় এলাকার বেরীবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে।
এছড়াও ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া ফেরীঘাট, কালাইয়া, সাঈদখালী ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলীখালী, চরখালী ফেরীঘাট সহ আশে পাশের এলাকার বেরীবাঁধ অরক্ষিত।
নাজিরপুরের শ্রিরামকাঠী এলাকা এবং সদর উপজেলার বেকুটিয়া ফেরীঘাট, মরিচাল সহ বিভিন্ন এলাকায় টেকসই বেরীবাঁধ নেই।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৩৪৯ কিলোমিটার বেরীবাঁধ থাকলেও তার মধ্যে ১৪৪ কিলোমিটার বেরীবাঁধ ঝঁকিপূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এসব নদী তীরবর্তী এলাকার তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষদের মধ্যে চড়ম আতংঙ্ক বিরাজ করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকবেলায়।
স্থানীয়রা জানান ২০০৭ সালের সিডরে জেলার উপক‚লীয় এলাকা, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর, সদর উপজেলা অধিকাংশ এলাকার বেরীবাঁধ ভেঙ্গে যায়। কিছু বেরীবাঁধ মেরামত করা আবার কিছু নতুন বাঁধ করলেও উপকুলীয় এলাকা এখনো অধিকাংশ এলাকাতেই নেই টেকসই বেরীবাঁধ। যেখানে সামান্য জোয়ারেই পানি ঢুকে প্লাবিত হয়।
লাহুড়ী এলাকার আবুল কালাম হাওলাদার জানান, সিডরে এলাকার বেরীবাঁধটি পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলেও এখনো তা মেরামত করা হয়নি। ফলে নদী পাড়ের বিশাল এ এলাকা সম্পূর্ণ ঝূঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ এলাকার মানুষজন। এখান থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ তাই ঘর ছেড়ে সবাই যেতেও চাইবে না সেখানে।
মাঝেরচর এলাকার রহিম ব্যাপারী জানান, মঠবাড়িয়ার টিকিকাটা এলাকার একটি বড় চর হলো মাঝেরচর। এখানে বেরীবাঁধ চড়ম ঝঁকিপ‚র্ণ। অনেক জায়গায় বেরীবাঁধ নেই বললেই চলে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাঝেরচর এলাকা। ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫ কিলোমিটার প্রস্ত এ চরটিতে প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের বসবাস। অনেকরই ফসলি জমি ঘেরের মাছ ঘরবাড়ি ক্ষতি হবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে। সময়ের পর সময় চলে গেলেও এখানে টেকসই বেরীবাঁধ নির্মান করেনি কেউ।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন মানুষের জীবন মাল রক্ষায় বেশ কিছু নতুন বেরীবাধ নির্মান করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বেরীবাঁধ নেই এমন ৫টি ফোল্ডার করে আমরা পাঠিয়েছি। বরাদ্ধ পেলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ গুলোও মেরামত করা হবে। ঝূঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি ভাঙ্গন এলাকায় জিওব্যাগ রাখা আছে। এসব জিওব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন এলাকা রক্ষার কাজ চলমান আছে।
এইচকেআর
